ডেস্ক রিপোর্ট :
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আকরাম হোসেন ওরফে আবির ও মো. আরাফাত রহমান। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি হলেন শফিউর রহমান ফারাবি।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। এ হামলায় গুরুতর আহত হন অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও।
অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেন।
২০১৯ সালের ১৪ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম এ মামলায় ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। এ আদালতে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ মামলায় ১৫ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। তারা হলেন মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি, আবুল বাশার, মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ওরফে গামা, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আবদুস সবুর ওরফে রাজু সাদ ওরফে সুজন, অনিক, অন্তু ও মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আসামি আবু সিদ্দিক সোহেলকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামি সোহেল অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্যে রেকি করাসহ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন। আসামি মোজাম্মেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে মোট ১২ জন জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ফারাবী হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা জোগান। আসামিদের মধ্যে মুকুল রানা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন।
অভিজিৎ খুনের সময় জিয়া সেখানে ছিলেন।
জঙ্গি নেতা আরাফাত রহমান আদালতকে বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে অভিজিৎ ও তার স্ত্রী বইমেলা থেকে বের হয়ে আসতে থাকলে মেজর জিয়া তাকে টিএসসির মোড়ের দিকে যেতে বলেন। তিনি ও অন্তু টিএসসির মোড়ের রাজু ভাস্কর্যের কাছে উত্তর-পূর্ব দিকের ফুটপাতের দিকে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, তাদের সহযোগী আলী ও আনিক অভিজিৎকে কোপাচ্ছেন। অভিজিতের স্ত্রী চিৎকার দিলে আনিক তাকে কুপিয়ে আহত করেন। আনিকের চাপাতির কোপ অভিজিতের স্ত্রীর হাতে লাগে। লোকজন জড়ো হলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এই হত্যাকাণ্ডের সময় মেজর জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, সোহেল, সাকিব, শাহরিয়ার, হাসান, আকরাম সেখানে অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার মোটিভ হিসেবে যা পাওয়া গেছে, তা হলো অভিজিতের লেখালেখি ও ভিন্নমতের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
Discussion about this post