বিডি দর্পণ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর রূপরেখা তৈরি হতে পারে আজকের বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীন ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক আজ মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃশ্যত কোনো অর্জন হয়নি। বিশেষ করে কভিড মহামারির কারণে গত বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কূটনীতিতে প্রকৃতপক্ষে কোনো অগ্রগতিই হয়নি।
এ প্রেক্ষাপটেই এবারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবারের বৈঠক থেকে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু। বাংলাদেশ আরও আগেই মিয়ানমার ও চীনকে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ঢাকা চায় আগামী বর্ষার আগেই প্রত্যাবাসন শুরু হোক। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অন্য কোনো আলোচনা নয়, বর্ষার আগে কবে, কখন ও কীভাবে প্রত্যাবাসন হবে তার রূপরেখা তৈরি করাই এ বৈঠকের আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখতে চায় বাংলদেশ।
এর আগের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ও মিয়ানমারের রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সে সময় মিয়ানমার কথা দিয়েছিল, তারা দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করবে। কিন্তু বাস্তবে সেই নিশ্চয়তার প্রতিফলন খুব কমই দেখা গেছে। এর আগে অন্যান্য পর্যায়ের আলোচনাতেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার যত কথা দিয়েছে, তার প্রায় কোনোটিই পালন করেনি। তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটা বদলেছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বেইজিংয়ের মনোভাবের বড় পরিবর্তনের কথা জানিয়ে গেছেন। সফরের সময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছে, তারা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরুতে আগ্রহী। ফলে মিয়ানমারের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে শুধু আন্তর্জাতিক চাপ নয়, বিশেষভাবে চীনের চাপও বেড়েছে। চীনের চাপ বাড়ানোর আরও বড় কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যু নিয়ে বেইজিংও আন্তর্জাতিক মহলে ‘ভাবমূর্তি’ সংকটে পড়েছে।
সংশ্নিষ্ট একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চলতি বছরের মধ্যেই শুরু করতে চীন একটি খসড়া রূপরেখাও তৈরি করেছে এবং সেটি নিয়ে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আজকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সে রূপরেখা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হবে। এমনও হতে পারে যে, এ বৈঠকের পরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর একটি সম্ভাব্য দিন বা মাস জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বৈঠকে তিন পক্ষের ফলপ্রসূ আলোচনার ওপর।
আজকের বৈঠক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে। সংগত কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে চীনের আরও কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা আশা করে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, আসিয়ান জোটসহ ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও কার্যকর ভূমিকা নিয়ে সম্পৃক্ত হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং রোহিঙ্গারাও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তার সফরের সময়ে রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং যাতে মিয়ানমারের সহযোগিতা পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করার বিষয়ও সেখানে নিশ্চয় ছিল।
আজকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নতুন কী আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি নতুন আলোচনা হতে পারে যে, প্রত্যাবাসনের জন্য বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গা বাছাই করার বদলে গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক করা। গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিতে রোহিঙ্গা দল নির্বাচন করা হলে সেটি বেশি বাস্তবসম্মত হবে। একটি গ্রাম বা অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের একযোগে ফেরত পাঠালে সেটি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হবে। কারণ এক দিনে এক লাখ পাঠানো যাবে না। এ কারণেই গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা হলে সেটাই যুক্তিসঙ্গত হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া দরকার এবং সেই আলোচনাই হবে।
Discussion about this post