বিশেষ প্রতিবেদক:
মেজর (অব:) সিনহা হত্যা মামলার এক বছর দুই মাসের মধ্যে মঙ্গলবার ওসি প্রদীপকে সবচেয়ে বেশি ভেঙ্গে পড়তে দেখা গিয়েছে। কাঠগড়ায় বিমর্ষ অবস্থায় ছিলেন তিনি। এক সময়ের প্রভাবশালী এই পুলিশ কর্মকর্তার চোখে মুখে ছিলো এক ভিন্ন রূপ।
আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ১১তম দিনে সাক্ষী সেনোয়ারা বেগম আদালতের কাঠগড়ায় উঠার পর থেকেই বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়।
জেলা ও দায়রা জজ মোঃ ইসমাইলের আদালতে সেনোয়ারা বেগম ৪ ঘণ্টা সময় ধরে সাক্ষ্য প্রদান ও আসামী পক্ষ জেরা করেন। সেনোয়ারা সাক্ষ্য প্রদানের পুরো সময় ওসি প্রদীপ বিমর্ষ হয়ে ছিলেন।
সাক্ষী সেনোয়ারার স্বামী সিএনজি চালক জলিল ঊল্লাহকে ৭ মাস বন্দি রেখে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রদানের সময় সেনোয়ারা বেগম আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
এই সময় তিনি বারবার ওসি প্রদীপকে তিরস্কার করছিলেন। এই সময় ওসি প্রদীপ নিচের দিকে মাথা নত করে কাঠগড়ায় দাড়িয়ে ছিলেন।
কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর এড: ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, সেনোয়ারা খুবই সাহসী নারী। তার স্বামী সিএনজি চালক জলিল ঊল্লাহকে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ধরে নিয়ে গিয়ে ৭ মাসের বেশি সময় টেকনাফ থানার বন্দি রাখা হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বন্দুকযুদ্ধে নাটক সাজিয়ে তার স্বামীকে হত্যা করে।
পিপি ফরিদ জানান, ভিকটিম সাক্ষী সেনোয়ারা যখন তার স্বামীকে বন্দি করা থেকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করার প্রতিটি মুহূর্তের ঘটনা আদালতকে জবানবন্দি দিচ্ছিলেন। সেই সময় আদালতে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আদালতে আসামী প্রদীপের চোখমুখ একজন অপরাধীর রূপ ধারণ করে।
কাঠগড়ায় অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। এই মামলার চলাকালীন সময়ে আজকেই (মঙ্গলবার) প্রদীপকে সবচেয়ে বেশি বিমর্ষ দেখা গেছে।
প্রদীপের আইনজীবী এড: রানাদাশ গুপ্ত বলেন, সাক্ষী সেনোয়ারা বেগম এই মামলার ঘটনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তিনি তার আসামীকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, এই মামলার বিচার দ্রুত করতে গিয়ে যাতে কোন ধরনের ভুল না হয় সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তার বয়স হয়েছে, এই মামলার ঘন ঘন সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করায় সময় আইনজীবী হিসেবে তার বয়সের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
মঙ্গলবার ৩ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এই নিয়ে মোট ১৭ আসামীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বুধবারও এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিনড্রাইভ রোডে পুলিশ চেকপোস্টে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
Discussion about this post