আলাউদ্দিন এর গুচ্ছ কবিতা
১। ফিরতে চেয়েছিলাম
পেরিয়ে গেছি লাল পতাকা, পেরিয়ে গেছি ঢেউমালা;
চলে গেছি নীল জলে।
আমাকে বাধা দিয়েছিল লাইফগার্ডের দল-
শুনিনি সতর্কবার্তা, আমি স্বাধীনচেতা বলে।
ডুবে যাচ্ছি, ঠাঁই নেই, বাঁচতে চাইছি-
দেখি তুমি নেই বালুচরে!
আমি আমার ফ্যান্টাসি-প্রেমিকার আহ্বানে
ফিরতে চেয়েছিলাম উপকূলে।
নারী উদারপন্থী নয় বুঝতে দেরি…একশবার মরলেও
পিছু ডাকবে না বাধা দেবে না জেনে,
সাহায্য চাইনি, কোনো সংকেত দিইনি-
মরব তবু ডুবুরির দল যেন আমায় উদ্ধার না করে।
আস্ত একটা জীবন কল্পনার ওপর দণ্ডায়মান-
কারও সাড়া নেই, ফেঁসে গেছি
শুধু একা ডুবে যাচ্ছি অতল গহ্বরে;
আমি তো ফিরতে চেয়েছিলাম উপকূলে, বালুচরে, না মরে।
২। দুচোখের বিষ
আমি জানি,
আমাকে তোমার মনে পড়ে;
খুব বেশি মনে করো ভেবে খুশিতে গদগদ করছি- এমনটা না।
কিন্তু হলফ করে বলতে পারি-
তোমার আমাকে মনে পড়ে;
জানলার ধারে, একা বিকেলে, একটু হলেও।
তোমার অতীত ঘাটলে সেখানে তুমি আমাকে দেখতে পাও, স্পষ্ট- অস্বীকার করতে পারবে?
আমি এ-ও জানি,
তুমি আমাকে মনে করতে চাও না। তুমি আমাকে ভুলে থাকতে চাও-খুব জোরালোভাবে।
আমি জানি,
আমি তোমার দুচোখের বিষ!
আমি যে তোমাকে অনুভবে রাখি-তুমিও সেটা অনুভব করো, জানো। কিন্তু তুমি পালিয়ে বেড়াও, নাগাল এড়াও। তুমি বোঝাতে চাও যে তুমি কিছু জানো না, তোমার কিছু মনে নেই।
আমি জানি,
আমার আড়াল হতে পারলেই তুমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচো। কিন্তু তোমার উপেক্ষাগুলো দৃশ্যমান, বড্ড বোকাসোকা, সহজেই ধরা যায়।
তবে,
দিনশেষে মৃত্যুর মতো এটাও সত্য যে-
তুমি আমাকে পুঁতে ফেলেছ গণকবরে। অনেক আগে। আমার মুখচ্ছবি পিষ্ট করেছ তোমার পদতলে-কল্পনার জগতে।
আমি জানি,
তুমি আরও পাল্টে যাবে। তুমি ঠিকই একদিন সবকিছু মানিয়ে নেবে। শাড়ির কুচি ধরাটা ঠিকঠাক শিখে যাবে। একদিন রান্নাঘরটা হবে তোমার আয়নাঘর। আর আয়নাঘর হবে তোমার বর।
আরও কত যে অভ্যাস তুমি নিজের করে নেবে-
তা ভাবতেই আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে!
৩। আলিঙ্গন
হলো না প্রণয়
হওয়া হলো না যুগলবন্দি
হলাম না প্রেমিক-প্রেমিকা;
আমাদের আর আলিঙ্গন করা হয়ে উঠল না গো!
ছোঁয়া যাবে না
ধরা যাবে না নিশ্চিত-
শুধু সমানে ভালোবেসে যাই;
বিপরীতে-
যদি প্রথা ভেঙে একটা ‘নিষিদ্ধ আলিঙ্গন’ করতে পারতাম নন্দিনী, তোমাকে!
৪। ভস্মীভূত জীবন
দাও দাও,
তছনছ করে দাও আমায়;
তছনছ করে দাও আমার ধ্বংসাবশেষটুকুও!
মুছে দাও আমার নাম-জগৎসংসার থেকে!
যাও যাও,
নিয়ে যাও আমায়;
নিয়ে যাও আমার ধ্বংসাবশেষটুকুও!
ছারখার ছাইগুলো-কী লাভ রেখে?
৫। কেউ দেখেনি কেউ বোঝেনি
কেউ দেখেনি কেউ দেখেনি
আমার নজিরবিহীন প্রেম— তাহার প্রতি।
কেউ বোঝেনি কেউ বোঝেনি
তাহার ছলচাতুরী স্বভাব— আমার প্রতি।
কেউ বোঝেনি কেউ বোঝেনি
তাহার সাথে কীসের বিবাদ!
কেউ দেখেনি কেউ দেখেনি
আমার করা প্রেমের আবাদ।
৬। টেক্সট
ধরো,
কোনো একদিন আচমকা এক বিকেলে, বেশরম আমি, ফোন নম্বর জোগাড় করে তোমার ঠিকানায় লিখে বসলাম-
“হলুদ থ্রি-পিসে সেদিন তোমায় দারুণ লাগছিল! কোথায় দেখেছি বলা বারণ।”
হঠাৎ, টেক্সট দেখে সেদিনও কি রাগ করবে, নাকি মৃদু হেসে একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য শ্বাস ফেলে বলে উঠবে-
“তুই একটা পাগল!”
Discussion about this post