আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাস্তবতা দূরে সরিয়ে কল্পনার নাটাই ছেড়ে দেই আমরা, বড্ড বেশি আবেগ নির্ভর! আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগে সেই আবেগের প্রশ্রয়ে জেতার স্বপ্নটাও উঁকি দিচ্ছিলো সমর্থকদের মনে। কিন্তু যা হবার তাই যেন হলো! মাঠের ক্রিকেটে আরও একবার বিবর্ণ বাংলাদেশ। শ্রীলংকার পর এবার দল হেরে গেলো ইংল্যান্ডের কাছেও।
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে এবার বাংলাদেশ হারল ৮ উইকেটে! বিশ ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমেই হার দেখলো বাংলাদেশ!
বুধবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে দুপুরের ৩৬ ডিগ্রি ছাড়ানো তাপমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তুলে মাত্র বিশ ওভারে ১২৪ রান। জবাবে নেমে ۔۔ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে দলটি অনায়াসেই পা রাখে জয়ের বন্দরে।
যে ইংল্যান্ড আগের ম্যাচে ৫৫ রানে অলআউট করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের কাছে বাংলাদেশের এমন হারই তো স্বাভাবিক! জিততে হলে খেলতে হয় মাঠে, সেটাই পারেনি বাংলাদেশ। যে পুঁজি দিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা, তা নিয়ে লড়াই করা যায় না।
যে একটা উইকেট পড়লো তা পেলেন নাসুম, তিনি ফেরান জস বাটলারকে। তিনি ফেরেন ১৮ বলে ১৮ করে! প্রথম ১০ ওভারে ইংল্যান্ড তুলে ৯০ রান। জেসন রয় ও ডেভিড মালান এরপর ইংল্যান্ডকে এনে দেন সহজতম জয়। আরও একবার আমিরাত প্রবাসীদের হতাশ করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা! ছুটি নিয়ে হাসিমুখে মাঠে এসে খেলা দেখে শুধু হতাশা সঙ্গী হলো তাদের।
এর আগে লিটন দাস শুরুটা করেছিলেন দুর্দান্ত। মঈন আলির করা প্রথম ওভারে টানা দুই বলে চার মেরেছিলেন। মনে হচ্ছিল, নিভু নিভু করে জ্বলা আশার প্রদীপটা বোধ হয় এবার জ্বলে উঠবে। কিন্তু লিটন তার পুরোনো রোগটা ভুলতে পারলে তো!
পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারে দুজন ফিল্ডার ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকেন। লিটন এই দুইজনের একজনের হাতে তুলে দেওয়াটাকে নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। এর ব্যত্যয় হলো না এদিনও। পরের বলেই আরেক ওপেনার নাঈম শেখ তো ক্যাচ তুলে দিলেন ত্রিশ গজ বৃত্তের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতেই।
আবুধাবির উইকেট কেমন হবে অনুমান করা গিয়ে ছিল প্রথম ওভারে ইংলিশ ‘পার্টটাইম’ অফ স্পিনার মঈন আলির প্রথম বলেই, অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পড়ে স্টাম্পের ভেতরে টার্ন করল। মঈন আলীর এক ওভারেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বাংলাদেশ দল, পুরো ম্যাচেই আর ফিরতে পারেনি!
লিটন ৮ বলে ৯ আর নাঈম ৯ বলে ৭ রান করে আউট হন। ফের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে বের হতে ব্যর্থ হয় উদ্বোধনী জুটি। দ্রুতই ফেরেন সাকিবও। তার টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি সত্যি। কিন্তু আউট হওয়ার পেছনে আদিল রশিদের দুর্দান্ত ক্যাচের কৃতিত্বটাই বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেবে বোধ হয় আফিফ হোসেন ধ্রুবর আউট।
এমনিতেই নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহানো অধিনায়ক রিয়াদের কারণেই তো এই তরুণ তুর্কীকে দ্রুতই ফিরতে হলো। যেখানে এক রানও হয় না, সেখানে দুই রানের কল দিলেন। পরে নিজে থেমেও গেলেন, তাতে আফিফকে আউট হতে হলো দৃষ্টি কটু ভাবে । সে ক্ষতি তো রিয়াদও পোষাতে পারেননি। আউট হয়েছেন বিশ্রীভাবে।
ইংলিশদের বিপক্ষে আগের পরিকল্পনায় ম্যাচের মতোই একাদশে ৩ স্পিনার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। পরিবর্তন বলতে ইনজুরির কারণে স্কোয়াড থেকে ছিটকে যাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গা নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামটা যদিও যৌক্তিক হয়নি। তবে বরাবরের মতো আজও ব্যর্থ ওপেনিং জুটি। পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে সাকিব আল হাসান আউট হন ক্রিস ওকসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। দেখার মতো এক ক্যাচ নেন আলিদ রশিদ।
সাকিব ৭ বলে ৪ রান তুলে আউট, বিদায় হলে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় মাত্র ২৭ রান। এরপর চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ব্যক্তিগত ৯ রানে একবার জীবন না পেলে চতুর্থ উইকেটে তাদের ৩৭ রান পার্টনারশিপটা আরো আগেই শেষ হয়ে যেত।
স্লো উইকেটে মুশফিককে লেগ বিফোর আউট। ৩০ বলে খেলে ২৯ রানেই থামতে হয় মুশফিককে। ‘বিতর্কিত’ রিভার্সসুইপে উইকেট বিলিয়ে আসেন মুশি!
আফিফ হোসেন এ আরও একবার ব্যর্থ। এবার যদিও রান আউট! মাহমুদউল্লাহও হতাশ করেন, ক্যাচ তুলে দিলেন সেই লিভিংস্টনের বলে। মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন ২৪ বল খেলে ১৯ রানে। ৮৩ রানে ৬ উইকেট শেষ!
শেষদিকে নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদরা কিছুটা লড়াই করেন! মেহেদী ১১। সোহানও ১১। অপরাজিত নাসুমের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ১৯।
বিস্ময়কর হলেও সত্য ১২০ বলের ইনিংসে ৪৬ বলো রান পায়নি বাংলাদেশ! এরপর আর টি-টোয়েন্টি তে জয় প্রত্যাশা করা যায়? দুই হারে বিশ্বকাপের সেমি۔ফাইনালে খেলার স্বপ্নটাও এখন ধূসর! আর কতো দুঃসপ্ন সঙ্গী হবে বাংলাদেশের?
Discussion about this post