বিশেষ প্রতিবেদক:
দুই মাসের ব্যবধানে ৪ দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার ৪০টির বেশি গ্রাম। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর আমন ধানের ফসল। তলিয়ে গেছে শত শত পুকুর ও দুই হাজার একর চিংড়ি ঘের। বন্যার পানি ও প্হাড়ি ঢলে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছ। বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে সমগ্র উখিয়া উপজেলার মানুষ।
গত বুধবার রাত থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে উখিয়ার ৫ টি ইউনিয়নের ৪০ টির বেশি গ্রাম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং, জালিয়া পালং ও পালংখালী ইউনিয়নে।
হলদিয়া ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ডুকে পড়ায় রান্না হচ্ছেনা অধিকাংশ ঘরে। যার ফলে না খেয়ে আছে বন্যা প্লাবিত এলাকার মানুষ।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাশেল চৌধুরী জানিয়েছেন, উপজেলার ৫ ইউনিয়নে অনেক এলাকার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। জালিয়া পালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানিয়েছেন, দুই মাসের ব্যবধানে ৪ দফা বন্যায় তার ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বন্যার কারনে ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় কৃষকের ধান ক্ষেত পানির নিচে ডুবে আছে। ৪ দফা বন্যায় মাত্র ৩ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এইবারে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য এখনো পর্যন্ত সরকারি কোন সহয়যোগিতা আসেনি। বন্যা কবলিত মানুষের জন্য তিনি দ্রুত সহযোগিতা কামনা করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২ হাজার একর চিংড়ি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। আমন ধান পানির নিচে তালিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন বরাদ্দ এখন দেয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানান, উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পাহাড় ধসের ঘটনায় তাদেন মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন—১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের তিন ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ এবং আব্দুল ওয়াহেদ।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার শামশুদ দৌজা নয়ন জানান, ভারী বর্ষণে ক্যাম্পে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়। সেখানে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে।স্বেচ্ছাসেবকরা মৃতদের গুলো উদ্ধার করে।
বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে, যার ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।
Discussion about this post