পলাশ বড়ুয়া:
কক্সবাজারের উখিয়ায় বহুল আলোচিত পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়াস্থ আব্দুল লতিফ ওয়াকফ এস্টেটের ৫০ একর জায়গার উপর এডিবি’র অর্থায়নে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য বিশেষ প্রকল্পের কাজে বাধা সৃষ্টির পায়তারা করছে কতিপয় ভুমি খেকো সিন্ডিকেট। গত ৩ বছরে উক্ত চিংড়ীঘের দখলকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে এস্টেটের জায়গা নিয়ে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা হিসেবে উখিয়া-টেকনাফে গভীর নলকূপ স্থাপন না করে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের মাধ্যমে মানুষের সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য বিশেষ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। যা দেখভাল করছেন সরাসরি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ইং তারিখের পিডি/ইএপি-৭৪৯ মূলে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রম জরুরী সহায়তা প্রকল্প পরিচালক মো আব্দুল হালিম খান স্বাক্ষরিত এমএ লতিফ ওয়াকফ এস্টেট এর সভাপতি ওয়ালিউল ইসলাম বরাবরে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি প্রেরণ করা হয়।
প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো: আল আমিন বিশ্বাস বলেন, শতভাগ পরিবেশ বান্ধব এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাবেন। এটা নিয়ে কারো দ্বিমত পোষনের বিন্দু মাত্র সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, নাফনদীর তীর ঘেষে পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়ায় ওয়াকফ এস্টেট মালিকের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে সরকারি উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উক্ত কাজের উপকারভোগীদের জরিপ শেষে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে স্টেটের ম্যানেজার মো: এনামুল হক বলেন, ১৯২৭ সালে ওয়াকফ দলিল নং-৩১১ মূলে ৯শ ২৭ চিংড়ি ঘের রয়েছে। উক্ত স্টেট পরিচালনার জন্য ২৩ মে ২০১৮ সালের ১০ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে ৪/৫শ পরিবার বসতিসহ বিজিবি ক্যাম্প, মসজিদ, মাদ্রাসা রয়েছে। এসব বৃহত্তর জনগোষ্টির স্বার্থ বিবেচনা করে তৎমধ্যে ৫০ একর জমি সরকারের সাথে ২০ বৎসরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্প্রতি আরো ৫০ একর জমির চাহিদা রয়েছে। প্রকল্পের কাজের বাধাগ্রস্থ করার জন্য মৃত আবদুল মহি’র ছেলে এমএ মঞ্জুর গং টেন্ডার ও চাঁদা দাবী করে। টেন্ডার/চাঁদা না পেয়ে তার নেতৃত্বে স্থানীয় রমজান আলী, মৃত এরশাদ আলীর ছেলে ছৈয়দ নুর, জাহেদ আলম, শামশুদ্দিন, মোকতারসহ আরো কয়েকজন এস্টেটের বর্গা চাষীদের রাস্তায় নামিয়ে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। অতীতেও এরকম উসকানি দিয়ে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ মঞ্জুর বলেন, স্টেটের প্রকৃত মতোয়াল্লি হচ্ছেন সোহেল মোস্তফা চৌধুরী। তিনি এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না। আনোয়ার চৌধুরী খোকা একজন অবৈধ মতোয়াল্লি। তিনি এসব করছে। মঞ্জুর তার সম্পর্কে চাঁদাবাজির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন। আমি কাউকে উসকানি দিই নাই। স্থানীয়রা আমাকে নিয়ে গেছেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন জুয়েল বলেন, স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে সরকারি কাজে বাঁধা সৃষ্টির পায়তারা চালাচ্ছে গুটি কয়েক সুবিধাবাদী। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে বিঘ্নতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি এখনো অবগত নন। উক্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হবে। কেউ আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমণ করা হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় জনগোষ্টির নিরাপদ সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেই বিষয়টিও সরকার দেখবেন। তাছাড়া স্থানীয় কিছু মানুষকে সংঘবদ্ধ করে মানববন্ধন কিংবা বিক্ষোভ করার বিষয়টি যথাযথ নয়। এসব করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। কেউ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Discussion about this post