বিশেষ প্রতিনিধি :
মরণ নেশার টেবলেট ইয়াবা বিরোধী এক অন্য রকমের নিরব অভিযানে নেমেছেন কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী থানা উখিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ। থানার ওসির এ অভিযানে সঙ্গীয় সশস্ত্র কোনো পুলিশের দল থাকে না। থাকে না হুঁইসেল বাজানো গাড়ির বহর। ওসি’র নিরব অভিযানে কাউকে আটক করা হয় না।
প্রায় ৫ মাস আগে উখিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে যোগদান করেন পুলিশের পরিদর্শক আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জে এর আগে চাকরি করার সুযোগ হয়নি তার।
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়া ও টেকনাফ থানা দুটি একমাত্র ইয়াবার কারণেই দেশ-বিদেশে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে। ইতিমধ্যে সীমান্ত থানা দুটিতে কথিত বন্দুক যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ২৮৭ জন ইয়াবা কারবারি। এরমধ্যে টেকনাফ থানার বহিষ্কতৃ ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সময়ে কেবল পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছেন ১৬১ জন কারবারি। এ ছাড়াও দেড় শতাধিক ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পণ করিয়ে কারাগারে আটকও রাখা হয়েছে। এতসব ঘটনার পরেও সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার থামেনি।
ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ বলেন, আমি অনেক চিন্তা করেই ব্যতিক্রমী এক নিরব অভিযান শুরু করেছি। আর ভয় নয়, এবার ঘরে ঘরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গ্রাম থেকে গ্রামে আমি ছুটছি উদ্বুদ্ধকরণ অভিযান নিয়ে।’
ওসি বলেন, ইয়াবা কেবল একজন বা একটি পরিবারকে ধ্বংস করছে না, ধ্বংস করছে গোটা জাতি এবং দেশকে। যদিওবা সাময়িক কিছু টাকা আয়ের মোহে পড়ে গুটি কয়েক ব্যক্তি একাজে জড়িত রয়েছে তারাও পরে ‘মোহ’ ছেড়ে ইয়াবায় সবাইকে ধ্বংস ডেকে আনার কথাটি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
থানার ওসি এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বর থেকে শুরু করে স্থানীয় সর্দ্দার-মাতব্বরদের ডেকে ডেকেই তাগিদ দিয়ে চলেছেন ইয়াবা কারবারিদের ভয় না দেখিয়ে তাদের বুঝানোর কথাটি। উখিয়া থানার ওসি নিজেও বসে নেই। তিনি প্রতি শুক্রুবার রুটিন মাফিক কোনো না কোনো মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। খুৎবার আগের সময়টুকুতে তিনি দাঁড়িয়ে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন, ইয়াবার টাকা ধর্মীয় ভাবেও হারাম। ইয়াবার টাকা নিয়ে কেউই প্রকৃতভাবে বেশী দিনের জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তি হতে পারেন না। আইন যে কোনদিন তার উপর হামলে পড়ে সমুলে নিঃশেষ করে দিবে। ইয়াবা আমাদের পুরো জাতিকে ধ্বংস করছে। সেই সাথে তিনি (ওসি) বাল্য বিবাহ, জঙ্গীবাদ সহ অন্যান্য অপরাধজনক কাজ থেকে বিরত থাকতেও মানুষকে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন।
থানার ওসি জানান, উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ৪৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ টার্গেট করে রেখেছেন, যাতে পালাক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন। ইতিমধ্যে ১৫টি মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজে ইয়াবা বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। কেবল মসজিদ নয়, এলাকার ধর্মীয় মাহফিল যেখানে সেখানেই উখিয়া থানার ওসি নিজেই গিয়ে হাজির হন। মাহফিলে নির্ধারিত ওয়াজ করার আলেমদের সাথে তিনিও একজন বক্তা। ইতিমধ্যে ৬/৭ টি বড় ওয়াজ মাহফিল এবং সীরাত মাহফিলে ওসি নিজেই বক্তব্য রেখেছেন।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, এমন একজন ওসি আর আমরা পাইনি। ওয়াজ মাহফিল এবং মসজিদে গিয়ে মরণ নেশা ইয়াবা টেবলেট বিরোধী এরকম বক্তব্যও এর আগে কোনো ওসি রাখেননি। আমার এলাকার মানুষ ওসির বক্তব্য অত্যন্ত পজেটিভ হিসাবে নিচ্ছেন।
উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, মসজিদে ওসির ইয়াবা, বাল্য বিবাহ ও জঙ্গীবাদ থেকে মানুষকে দুরে থাকার উপদেশ এলাকার মুরুব্বিরা ভালোভাবেই নিয়েছেন।
Discussion about this post