কক্সবাজারের উখিয়ায় নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে মাঠে নেমেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানে ২ টি হাসপাতাল ও একটি ডেন্টাল ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২৯ মে) দুপুরে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও কোর্টবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২টি অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করা হয়। পরে একটি ডেন্টাল ক্লিনিকের কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করে সীলগালা করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর স্মারক নং-স্বাঃঅধিঃ/সমন্বয়/সভা/২০২২/২২৭(৯) তারিখের সভার প্রেক্ষিতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে কার্যকর শুরু করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি), মোঃ তাজ উদ্দীন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা, ডা. রনজন বড়ুয়া রাজন, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহি উদ্দীন মহিন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোঃ নুরুল আলম, পরিসংখ্যানবিদ সঞ্জয় দাশকে সাথে থানা পুলিশের সহযোগীতায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
অভিযানে বালুখালী বাজার সংলগ্ন ‘‘বি. কে. ডেন্টাল কেয়ারে’’ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ক্লিনিকে কাউকে পাওয়া যায় নি, ডেন্টাল কেয়ারটি সীল গালা করে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলার পালংখালী বাজারের ইয়াকুব মোস্তফা মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত ‘‘তাজমান হাসপাতাল’’ পরিদর্শন করা হয়। ওই সময় হাসপাতালের কাগজপত্র পর্যালোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে নিবন্ধনের কোন কাগজ পত্রের প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি।
ওই সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাজমান হাসপাতালকে ৪০ হাজার টাকা অর্থ দন্ডসহ হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
উক্ত হাসপাতালে গত (২৬ মে) রাত ৮ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে র্যাব-১৫ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে উক্ত ভূয়া ডাক্তার পালংখালী নলবনিয়া এলাকার সাবেক মেম্বার ও জামাত নেতা মোঃ কবির আহমদের ছেলে সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান (২৪) কে আটক করেছিল। অভিযানের সময় তার বড় ভাই আর এক প্রতারক আব্দুল্লাহ মোঃ মোজাহীদ রায়হান পালিয়ে যায়।
পালংখালীর উক্ত তাজমান হাসপাতাল নিয়ে জনমনে ও সচেতন নাগরিকদের মাঝে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, পালংখালী নলবনিয়া গ্রামের মোঃ কবির আহমদের চার ছেলে মিলে উক্ত হাসপাতাল খোলে দীর্ঘসময় ধরে রোগী ও স্থানীয় সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তাদের রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক রোগী সংগ্রহ করার সিন্ডিকেট।
বিশেষ করে রায়হান নামের প্রতারক ডাক্তার না হয়েও নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে পালংখালী বাজারে ডাক্তারের চেম্বার খোলে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘসময় ধরে। পরে খোলে বসেন তাজমান হাসপাতাল নামে কসাইখানা।
রায়হানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিন্ডিকেট তৈরী করে তাজমান হাসপাতালে রোহিঙ্গা রোগী নিয়ে এসে মোটা অংকের টাকা আদায় করার।
অপ্রোজনিয় ও বিভিন্ন পরিক্ষা নিরিক্ষার নামে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এককথায় এটি হাসপাতাল নামে কসাইখানা বলা চলে। র্যাবের অভিযানের পর স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস এসেছে। শত শত মানুষ র্যাব-১৫ ধন্যবাদ জানিয়েছিল। একইভাবে আবারও স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করার কারণে সচেতন মহল ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
একইভাবে উপজেলার ব্যাস্ততম স্টেশন কোটবাজার ‘‘অরিয়ন হাসপাতাল’’ পরিদর্শনকালে হাসপাতালটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। মোবাইল কোর্ট টিম উক্ত হাসপাতালটিকে পূণরায় তালাবদ্ধ ও সীলগালা করে দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা, ডা. রনজন বড়ুয়া রাজন। তিনি জানান, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশে এধরণের অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Discussion about this post