মো. আলী আশরাফ মোল্লা –
২১ আমাদের জাতীয় জীবনে শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, নয় শুধু একটি তারিখ, নয় শুধু একটি দিন। একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের অস্তিত্বের সাথেই মিশে আছে। একুশ আমাদেরকে শিখিয়ে গেছে অন্যায় অসত্যের কাছে মাথা নত না করতে। নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে। রক্ত দিয়ে হলেও মায়ের ভাষা কে প্রতিষ্ঠা করতে। একুশের হাত ধরেই বাংলার সকল স্বাধীকার আন্দোলনসহ সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে সফলতা অর্জন করে বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা খোচিত ছাপান্ন হাজার বগর্মাইলের একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। একুশের পথ বেয়েই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পাক বাহিনীর শাসকদের চরম ভরাডুবি,১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন,১৯৬৯ গণ অভুথান,৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে বাঙালির বিপুল বিজয়, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিসংগ্রাম ঐতিহাসিক বিজয় এবং অবশেষে সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃর্ভাষা দিবস পালন। একুশ মানেই মাথা উচু করেই দাঁড়ানো। একুশ মানেই মৃত্যুকে তুচ্ছ করে জীবনের গান গাওয়া। একুশ মানেই বাঙালির অহংকার। একুশ মানেই আমাদের গর্ব। একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের যেই দামাল ভাইয়েরা বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা আর মাতৃর্ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে জীবন দিয়েছিল তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে হলে ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে। ভাষার বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় না। ভাষার প্রতি বিকৃতি করা হলে পরোক্ষভাবে ভাশাশহীদ দের প্রতিই অসম্মান করা হবে। আমাদের প্রিয় ভাষা বাংলা কে হুদয় দিয়েই লালন করতে হবে। অন্তর থেকেই তার শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শুধু লোক দেখানো ভাষা প্রীতি হলে হবে না। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে হবে। শুদ্ধ বাংলায় শিক্ষা দিতে হবে নতুন প্রজম্ম কে। প্রমিত ভাষায় লিখতে হবে,শিখতে হবে এবং শিখাতে হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কবি ও প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অমর সৃষ্টি
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি? না একুশে ফেব্রুয়ারি কে আমরা ভুলতে পারি না। একুশে ফেব্রুয়ারি কে ভোলা যায় না। ভুলা যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ এক অনন্য গৌরব গাঁথা। আমরা বাঙালিরা ভাষার জন্য বাংলার জন্য প্রাণ মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি। এই রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। বাংলায় মা কে ডাকার অধিকার। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলায় ৮ ই ফাল্গুন, ১৩৫৮ সূচিত হয়েছিল যে গনজাগরণ আর আমাদের চেতনার উন্মেষ তার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ এর সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শোক দিবস আর জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবেই উদযাপিত হয়ে আসছে। বহু পথ পরিক্রমায় অবশেষে ২০০০ সাল থেকে এই ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে পুরো বিশ্বজুড়েই।
১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় এবং ১৮৮ দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র সমুহের দেশুগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫ তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এখন আর শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বজুড়ে পালিত হবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এখন এটি শুধু শহীদ দিবস নয়, এটি হচ্ছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে আমাদের কে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখক –
সাধারণ সম্পাদক (সাবেক)
জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি
কলামিস্ট ও পুলিশ কর্মকর্তা।
Discussion about this post