দাফনের ২ মিনিট আগে বেওয়ারিশ লাশ স্বজনের কাছে নিয়ে আসলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রামে আন্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন হওয়ার আগ মুহুর্তে ভবঘুরে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করে নিজ খরচে মরদেহ স্বজনদের কাছে পৌছে অনন্য নজির স্থাপন করলেন মাহমুদুল হক চৌধুরী।
জানাগেছে ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে নাম পরিচয় বিহিন এক ব্যাক্তিকে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করার করার জন্য সব প্রস্তুত। আন্জুমানে মুফিদুল ইসলামের গোরখোদা মরদেহটি দাফনের জন্য কবর তৈরি করেছে। আনজুমানের সেচ্ছাসেবীরা দাফনের জন্য মরদেহটি গোসল করিযে কাফন পড়ি কবরস্থান করার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। হাতে মাত্র কয়েক মিনিট। স্বজন ছাড়া বেওরিশ লাশটি ২ মিনিটের মধ্যে কবরস্থ হবে। ঠিক সেই সময় ঘটনাস্থলে পৌছেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাহামুদুল হক চৌধুরী। তিনি মরদেহটি সনাক্ত করেন। মারা যাওয়া ব্যাক্তির উখিয়া উপজেলা হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমখাঁ কুলাল পাড়ার আবু নাছের উদ্দীন(প্রকাশ টুইন্না), তার পিতার নাম কবির আহমদ(প্রকাশ কবির ড্রাইভার)। দীর্ঘদিন আগে সে জীবিকার টানে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়।
মরদেহ দেখে মাহামুদুল হক চৌধুরী ঘটনাস্থল থেকে তার ছেলে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর মাধ্যমে মৃত ব্যাক্তির স্বজনদের খবর দেন। পরে চৌধুরী নিজ খরচে এম্বুলেন্স ঠিক করে দরিদ্র এই ভবঘুরের মরদেহ তার স্বজনদের কাছে পৌছে দেন। বুধবার সকালে নাছের উদ্দিনের নিজ এলাকায় রুমখাঁ আলিম মাদ্রাসার মাঠে জানাযা শেষে মা বাবা কবরের পাশে দাফন করা হয়।
চট্টামের কতোয়ালি থানার এস আই মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার মোবাইল ডিউটিতে থাকাকালীন সময়ে এসআই তোফাজ্জল হোসাইন স্যার জানান চেরাগির পাহাড় মোড়ে একটি বেওয়ারিশ লাশ পান। বেচারা অনেক কষ্টে লাশের সামান্য পরিচয় বের করে আমাকে দিয়ে বলল লোকটি তোমার উখিয়ার রুমখাপালং এলাকার। তোমার থানা এলাকার যদি পারো একটু পরিচয়টা সনাক্ত করে দাও, অন্তত শেষ ঘুমটা না হয় নিজ স্বজনদের কবরস্থানের মাটিতে ঘুমাক। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চলল লাশের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা। পিবিআই, সিআইডি লাশ সনাক্তকরণে সকল চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে আমার এলাকয় মরদেহটি সনাক্তকরণে চেষ্টা করে ব্যার্থ হওয়ার পথে।
এর মধ্যে লাশ নেওয়ার জন্য আসা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের লোকজনকে বসিয়ে রাখা হলো পাক্কা আড়াই ঘন্টা। খানিকটা পরিচয় সনাক্ত করা গেলেও লাশ নেওয়ার জন্য আগ্রহী কাউকে পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে লাশটি আঞ্জুমানকেই দিয়ে দেওয়া হলো। আঞ্জুমান লাশ নিয়ে গোসল করিয়ে লাশের গায়ে কাফন পরিয়ে জানাজাটা দেওয়া বাকি, এরই মধ্যে আমাকে মোবাইলে কল করলেন মাহমুদুল হক চৌধুরী। আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন লাশের জানাজা হয়েছে কিনা। আমি তাৎক্ষণিক খবর নিয়ে জানলাম লাস্ট জানাজার জন্য রেডি ২ মিনিটের মধ্যে জানাজা হয়ে যাবে।
উনাকে মোবাইলে কল করে জানাতেই উনি বললেন “আমার জন্য দশটা মিনিট অপেক্ষা করতে বলো আমি নিজে এসে জানাজা পড়বো”। আমি সারাদিন অফিস শেষ করে মাত্র বাসায় আসলাম তখনো কাপড় ছাড়িনি। ফোন করে বলে দিলাম জানাজা দশ মিনিট পরে করেন আমরা কয়েকজন লোক আসবো জানাযা পড়তে। যথারীতি আমার সাথে সাথে জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরীও পুরাতন স্টেশন রোড, ২২ মহল্লা কবরস্থান, চৈতন্য গলি উপস্থিত হলেন। নিজ চোখে লোকটিকে দেখে বললেন এই লোকটা আমার পাশের গ্রামের। আমি কোনভাবেই একে বেওয়ারিশ হিসেবে এখানে দাফন করতে দিবো না। তার পরিবার না আসলে আমি নিজেই নিয়ে যাব একে। আমার গ্রামের লোক কেন বেওয়ারিশ হিসেবে চট্টগ্রামের কবরস্থানে থাকবে। সাথে সাথে এলাকার মেম্বারকে ফোন করে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে পাঠালেন। তার পরিবার রীতিমতো ইতস্তত বোধ করছিল এত টাকা গাড়ি ভাড়া খরচ দিয়ে কিভাবে লাশ তারা নিয়ে দাফন করবে।
মাহমুদুল হক চৌধুরী বললেন, তোমাদের কোন খরচ করতে হবেনা গাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ সব আমি দিয়ে দিব, তোমরা শুধু জানাজা এবং দাফনের ব্যবস্থা করো। সাথে সাথে এম্বুলেন্স ডেকে নিজ হাতে দস্তখত করে লাশ বুঝে নিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন। আর রফিক মেম্বারকে বলে দিলেন যত ভোর সকালে হোক লাশটা যেন কষ্ট করে কোর্ট বাজার থেকে রিসিভ করে নিয়ে যায়। মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধাটা অনেক বেশি বেড়ে গেল। অবশেষে জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরীর সামান্যতম চেষ্টায় যেন একটি লাশ তার পরিচয় খুঁজে পেল।
মাহামুদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা একজন সর্বোচ্চ জনপ্রিয় নেতা। তিনি তার মহৎ কাজের মাধ্যমে গত ৪০ বছর ধরে উখিয়ার মানুষের মাঝে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
Discussion about this post