বিডি দর্পণ ডেস্ক:
চাকমা কিশোরী লাকিংমে নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হলেও অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে বাবা লালাঅং চাকমাকে ফিরিয়ে দেয় টেকনাফের আলোচিত ওসি প্রদীপ। অপহরণের ১১ মাস পর ‘জোরপূর্বক’ ধর্মান্তরিত হওয়া লাকিংমে জন্ম দেয় এক কন্যা শিশুর। আর সন্তানের জন্মের ১৩ দিন পর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয় এই চাকমা কিশোরীর।
আর আদালতে মামলা চলমান থাকায় চার সপ্তাহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকে চৌদ্দ বছর বয়সী এই কিশোরীর লাশ। পরে আদালতের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্তে র্যাব মেয়েটিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক নিশ্চিত করে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করে লাকিংমের লাশ।
শনিবার সন্ধ্যায় (১৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত এক মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বক্তরা এসব কথা তুলে ধরেন। লাকিংমের প্রতি ন্যায় বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধন ও তার স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জলনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি অপহৃত হয় লাকিংমে চাকমা। চৌদ্দ বছর বয়সের মেয়েটির লাশ প্রায় চার সপ্তাহ ধরে পড়েছিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে। পরে আদালতের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্তে র্যাব মেয়েটিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে নিশ্চিত হয়ে তার মা-বাবার কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
তারা বলেন, কেচিং চাকমা ও লালাঅং চাকমার সন্তান লাকিংমের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শিলখালি গ্রামে।
অভিযোগ আছে, টেকনাফের বাহারছড়া মাথাভাঙ্গা এলাকার ইয়াসিন, ইসা, আবু ইয়াসহ আরও পাঁচজন লাকিংমেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল গত বছরের (২০২০ সাল) ৫ জানুয়ারি। অপহরণের পর ৮ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত লাকিংমেকে আশপাশের গ্রামে রাখা হয়। ৯ জানুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় টেকনাফেরই শাহপরীর দ্বীপে। সেখানে জনৈক কালা মনুর বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল অন্তত দু’দিন। পরে তাকে জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও বিয়েতে বাধ্য করা হয়। অপহরণের পর কেটে যায় ১১ মাস। পরবর্তীতে সে একটি মেয়ে শিশুরও জন্ম দেয়। নিজের সন্তান জন্ম নেয়ার মাত্র ১৩ দিন পর মৃত্যু হয় লাকিংমের।
মানববন্ধনে দাবি করা হয়, চাকমা কিশোরী লাকিংমের মৃত্যুটিও স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটি হত্যা কিংবা আত্মহত্যার প্ররোচনা। কিশোরীর বাবা লালাঅং তার মেয়ে অপহরণের পর টেকনাফ থানায় মামলা করতে গেলে, তৎকালীন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মামলা নেননি। পরে ২৭ জানুয়ারি লালাঅং কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। আদালত থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবকে তদন্তভার দেয়া হয়। এ বছর ২৮ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অনতিবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের দাবি করেন। আয়োজকরা লাকিংমে আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করা, চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা লাকিংমে চাকমার পরিবারকে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া, লাকিংমের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করাসহ লাকিংমের সন্তানকে আইনানুযায়ী রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নিয়ে শিশুটির যথাযথ ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার দাবি করেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের আয়োজনে এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ঈশানী চক্রবর্তী, ড. জোবায়দা নাসরীনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফেরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। অনুষ্ঠানে, লাকিংমের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
Discussion about this post