কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ১ নং ওয়ার্ডের কলাতলী চন্দ্রিমারঘোনা একটি আবাসিক এলাকা। তবে এই এলাকায় বখাটেদের বিচরণ শহরের অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। চন্দিমা এলাকায় অর্ধ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। এর মধ্যে চাকরি ও পড়াশোনার জন্য আসা বেশির ভাগ লোক। তবে বখাটেদের মারাত্মক আধিপত্য এই এলাকায়। অভিযোগ উঠেছে, এই এলাকায় রয়েছে একাধিক গ্রুপ। যে গ্রুপে রয়েছে খোদ সমাজ পরিচলনা কমিটির পরিবারের সদস্যরাও। তাই তাদের বিরুদ্ধে সহজে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই বখাটেদের কারনে স্কুল-কলেজ ও চাকুরীজীবি মেয়েরা সহজে ঘর থেকে বের হতে পারেন না। আবার ইভটিজিং’ বা প্রেমের নামে বখাটেদের হাতে উত্যক্ত বা হয়রানির শিকার হয়ে অনেক পরিবার এলাকাও ছেড়েছেন। এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একাধিক বার জানালেও কোন ফল পাইনি বলে অভিযোগ তুলেন কলাতলী চন্দ্রীমা এলাকার সাধারণ মানুষ। এই কলাতলী দক্ষিণ আদর্শ গ্রাম (চন্দ্রীমা) এলাকায় যতগুলো ইভটিজিং-এর ঘটনা ঘটছে ভিকটিম সব ঘটনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা বা মামলা করাও হয় না জীবন রক্ষার ভয়ে।
কলাতলী চন্দ্রীমা এলাকার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা (ছন্দনাম)। এই স্কুল ছাত্রী বলে, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় কলাতলী রেস্ট হাউজ, সেলিম টাওয়ারের নিচে কিছু বখাটে ছেলে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রথমে বেড সাউন্ড পরে পিছু পিছু গিয়ে প্রেমের প্রস্তাব না হয় টিস্যু দিয়ে মোবাইল নাম্বার দেয়। এভাবেই প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে বখাটেরা। আবার মাঝে মধ্যে বাইক নিয়ে পথ আটকিয়ে দেয় তারা। তাদের এসব দেখলে আমার প্রচুর ভয় লাগে। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
কলাতলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী শাহিদা আক্তার বলেন, মাঝে মধ্যে রাগ হয় কোন দেশে জন্ম হয়েছে। যেখানে মেয়েদের বিন্দু পরিমাণও নিরাপত্তা নাই। এই এলাকায় বেশির ভাগ বখাটে ছেলেদের আনাগোনা এবং প্রেমের প্রস্তাবের নামে আমাদের পথ আটকিয়ে দেয়। আর এসব দেখেও কেউ কথা বলতে চায় না। তাই প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
নিরাপত্তা জনিত কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এই এলাকায় যারা সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারাই বেশি বেপরোয়া। এখানকার সমাজ পরিচলনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের ভাই আরফাত ও তার বন্ধুবান্ধব মিলে বেশির ভাগ এসব অপরাধ করে থাকে। এই বিষয়ে তাদের অভিযোগ করলেও উল্টো প্রমান খুঁজে। এই হচ্ছে এখানকার সমাজ পরিচলনা কমিটি নামে পকেট কমিটি। যারা সব অপকর্ম করে থাকেন। তাই মেয়েদের স্কুলে পাঠাই না।
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত এক এনজিও কর্মী ইশরাত বলেন, অফিস শেষ করে ঘরে ফেরার পথে কিছু বখাটে খুব খারাপ ভাষায় মন্তব্য করেন। এবং সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ধুমপান করে । মাঝে মধ্যে তারা নিজেরাই মোবাইল নাম্বার দিতে ব্যার্থ হলে ঝগড়া করেন।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, প্রেমের নামে স্কুল ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরিজীবী মেয়েদের এসব উত্যক্ত বা হয়রানির নেতৃত্ব দেন কলাতলী চন্দ্রীমা সমাজ পরিচলনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক এখলাস এর ভাই আরফাত ওরফে নূরায়া আরফাত। তার রয়েছে একটি কিশোরগ্যাং গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যদের অনেকের মামলাও রয়েছে। এর আগেও একই ঘটনায় জেল কেটেছিল আরফাত। ভাইয়ের সমাজ পরিচলনা কমিটি পদকে ব্যবহার করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আরফাত। তার বিরুদ্ধে সহজে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
আরফাতের সহপাঠীরা জানান, সে মেয়েদের ফাঁদে ফেলে তাদের জীবন নিয়ে খেলে। এলাকায় তাকে ‘লাভ গুরু’ হিসাবে চেনে। তার গ্রুপের সদস্যরা মিলে মানুষের ঘরের সামনে গিয়ে ধুমপান করে। এসব নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। তার এসব চলাফেরা নিয়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
এই বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা অতি শীগ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। এসব বখাটেদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
Discussion about this post