অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই –
মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমনের ফলে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস স্কুল, কলেজ সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু সরকারি নির্দেশ মোতাবেক শিক্ষকেরা অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় লকডাউন এর পর থেকেই নিয়মিত অনলাইনে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই এর চন্দ্রঘোনা ব্যাপ্টিস্ট মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানি।
তিনি তাঁর বাড়িতে বসেই নিয়মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছেন। শুধুই পাঠদান নয়, ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি প্রতিনিয়ত গান, কবিতা, গল্প বলা সহ শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনের বিকাশ সাধনের জন্য সহ-পাঠ্যক্রমিক ক্লাসসমূহ পরিচালনা করছেন। এতে সারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়েছেন।
বর্তমানে তাদের কাছে শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানি একজন প্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঘরে বসেও এই কোমলমতি শিশুরা প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহনের পাশাপাশি তাদের বাড়ির কাজ গুলো করে শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানির নিকট পাঠান। এবং তিনি সেই কাজ গুলো যাচাই করে তাদের ফিডব্যাক প্রদান করেন।
শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানির সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে স্থবির হয়ে পড়লেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। লকডাউনের শুরু থেকেই তিনি তাঁর বাসার একটি রুম শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে সাজিয়ে তোলেন।
এরপর তিনি রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রাইমারির বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের উপর পাঠদান কার্যক্রমের ভিডিও প্রস্তুত করেন। সেইসাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, জুম এ্যাপস, স্ট্রিম ইয়ার্ড, গুগল মিট সহ বিভিন্ন এ্যাপসের সহায়তায় লাইভ পাঠদান কার্যক্রমও পরিচালিত করেছেন।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে তিনি তাঁর ধারণকৃত পাঠদান কার্যক্রমের ভিডিও গুলো তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ম্যাসেন্জার গ্রুপে শেয়ার করেছেন। এতে তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া ও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
তাঁর এই অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলা ছাড়িয়েও বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরাও তাঁর এই অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়ে নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহন করে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, তাঁর নিজস্ব অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, ইনেসিয়েটিভ ফর অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার সারা বাংলা, শিক্ষকের কলাম, শিক্ষার আলো.কম, রাঙ্গামাটি অনলাইন স্কুল, পিইসিই অনলাইন প্রাইমারি স্কুল, টিচার্স ড্রিম অনলাইন এডুকেশন, বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনায় এবং এটুআই এর বাস্তবায়নে ঘরে বসে শিখি সহ বিভিন্ন অনলাইন পেইজে অংশ নিয়ে তিনি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত করছেন।
উল্লেখ্য যে শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কতৃক জাতীয় শিক্ষা পদক ২০১৯ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি তাঁর কর্ম দক্ষতার মাধ্যমে ইত:মধ্যে ব্যাপক প্রশংসীত হয়েছেন। বাংলাদেশ গ্লোবাল ট্রেইনার একাডেমির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কতৃক আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালায় তথ্যজ্ঞ ব্যাক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানি সম্প্রতি শিক্ষক বাতায়ন রাঙ্গামাটি জেলার ICT4E জেলা এম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। রওশন শরীফ তানি শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন গুনী সংগীতশিল্পি ও উপস্থাপিকা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাংস্কৃতিক মঞ্চের একজন শিল্পি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছেন। এছাড়া তিনি জানান, ইতিমধ্যে তিনি অনলাইনে প্রায় ২ শত ক্লাস পরিচালনা করে রেকর্ড করেছেন এবং বিভিন্ন অনলাইন স্কুল থেকে সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এদিকে করোনা কালীন সময়ে শিক্ষার আলো ছড়াতে শিক্ষক রওশন শরীফ তানির ভূমিকা সুধীমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ক্লাসে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, তাঁদের সন্তানেরা করোনাকালীন সময়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকলেও শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানির ক্লাস গুলো তাঁদের জন্য ব্যাপক অবদান রেখেছে। শিক্ষার্থীরা অত্যান্ত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষক রওশন শরীফ তানির অনলাইন ক্লাস গুলোতে অংশগ্রহন করেছে। এজন্য অনেক অভিভাবক শিক্ষিকা রওশন শরীফ তানিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রওশন শরীফ তানি সবশেষে জানান, শিক্ষকতা পেশার প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা ও ভালবাসা থেকেই তিনি তাঁর করোনাকালীন অবসর সময়টি অনলাইনের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থেকে অতিবাহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পর স্কুল খোলা হলেও তাঁর এই অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম একইভাবে অব্যাহত রাখবেন বলে আশাব্যক্ত করেন।
Discussion about this post