গাজীপুরের শ্রীপুরে শ্রমিক বাহী বাসে বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৫ শ্রমিক মারা গেছে। আহত হয়েছে ১৫ জন। বাসটি শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে উপজেলার টেপিরবাড়ী গ্রামে অবস্থিত জামান ফ্যাশন নামক কারখানায় যাচ্ছিল।
ঘটনাটি ঘটনাছে রবিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের মাইজপাড়া রেল ক্রসিংয়ে। ট্রেনের ধাক্কায় বাসটি দুড়ে মুচরে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে গাজীপুরের জেলাপ্রশাসক মো. আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাসে শ্রমিক ছিলো প্রায় ৩০জন। গুরুত্বর আহত হয়েছে ১৫জন। ৫ জন নিহত হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে প্রিয়া (১৮) উপজেলার বালিয়া পাড়া গ্রামের জুলহাসের স্ত্রী, মাছুমা ও অজ্ঞাত তিন পুরুষের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহতরা হলো- নিলুফা আক্তার (৫১), জাহিদ (২৪), আরমান (১৯), নাঈম (২০), পারভেজ (৩৪), মাছুমা (১৮), ফারজানা (২০), হালিমা (২৫), মাহফুল (২৫), শিপন (১৯), হাবিবুল্লাহ (১৬), ছুলেমা (১৯), বেবি (৪০), রেশমি আক্তার (৪০), বিল্লাল হোসেন (২০)। সকলেই উপজেলার জামান ফ্যাশন নামক কারখানার শ্রমিক।
জানাযায়, বরমী এলাকা থেকে ৫টি বাসে করে উপজেলার টেপির বাড়ি গ্রামে অবস্থিত জামান ফ্যাশন নামক কারখানায় শ্রমিক যাতায়াত করে।
রবিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে শ্রমিক বাহী বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের মাইজপাড়া রেল ক্রসিং পার হচ্ছিল। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জাজিরা গামী বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি শ্রমিকবাহী বাসকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভেঙ্গে যায় পাশে থাকা গেইট ম্যানের কক্ষটিও। পাশেই ছিটকে পড়ে বাসটি। বাসে থাকা শ্রমিকগন গুরুত্বর আহত হয়। বিকট শব্দ ও শ্রমিকদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে আহতদের উদ্ধার করে শ্রীপুর হাসপাতালে নেয়।
আশংকা জনক অবস্থায় ৮জনকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে আহতদের স্বজনরা শ্রীপুর হাসপাতালে ভীর জমায়। তারা জানান, ঘটনাস্থলে প্রিয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে মাছুমা মারা যায়। ট্রেনে ইঞ্জিনে আটকে থাকা দুই পুরুষের মরদেহ গফরগাও রেলস্টেশনে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ ওই রেল ক্রসিং এর গেইট ম্যান ঘুমিয়ে ছিল। গেইটটি বন্ধ না থাকায় শ্রমিক বাহী বাসটি রেল সড়কে উঠে পড়লে ট্রেন এটিকে ধাক্কাদেয়।
কারখানার জি.এম আক্কাছ আলী জানান, মাইজপাড়া এলাকা থেকে ৫টি বাসে কারখানায় শ্রমিক যাতাযাত করে থাকে। দুর্ঘটনা কবলিত বাসে কতজন শ্রমিক ছিল তা জানা যায়নি। আহতদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. জান্নাতুন নাঈম জানান, দুর্ঘটনায় আহত যে সব শ্রমিক হাসপাতালে এসেছিল তাহাদের মধ্যে আশংকা জনক অবস্থায় ৮ জনকে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকীরা হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়া চলে গেছে। হাসপাতালে কোন রোগী মারা যায়নি।
শ্রীপুর ট্রেশনে কর্মরত ষ্ট্রেশন মাস্টার হারুন অর রশিদ জানান, বলাকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৭.৫ মিনিটে শ্রীপুর ষ্ট্রেশন ছেড়ে যায়। সোয়া সাতটার দিকে দূর্ঘটনা ঘটে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মো: শহিদুল ইসলাম জানান, ট্রেনে আটকে থাকা দুই পুরুষে মরদেহ গফরগাও স্টেশন থেকে উদ্ধার কওে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদেও পরিচয় পাওয়া যায়নি। খোজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান,স্থানীয় সাংসদ মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন সবুজ, উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল আলম প্রধান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও তরিকুল ইসলাম,।
এসময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনিছুর রহমান, দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ২০হাজার টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ১০হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান। এছাড়া দূর্ঘটনার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দূষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post