বিশেষ প্রতিবেদক:
“নাই টেলিফোন, নাই রে পিয়ন, নাই রে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম।” গ্রাম বাংলার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম পোষ্ট অফিস (ডাকঘর) এখন প্রায়ই বিলুপ্তির পথে।
তৎকালীন বৃটিশ আমলের প্রাচীন থানা শহর বর্তমানে বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার একমাত্র বৃহত্তর ডাকঘরে প্রাণচাঞ্চল্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে সেই দিনের পুরোনো দিনের গান গুলি-চিঠি দিও প্রতিদিন চিঠি দিও, একটা চিঠি দিলাম লিখে মনের কথা আজ তোমাকে ইত্যাদি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে চিঠিপত্র আদান প্রদান কমে যাওয়ায় দিন দিন রাজস্ব আয় হ্রাস পাচ্ছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম-টেলিগ্রাফের পরির্বতে মোবাইলে এসএমএস ও ই-মেইল প্রযুক্তির কারণে ডাকঘরে এখন আর সাধারণ মানুষের তেমন যোগাযোগ নেই। এক সময়ের এই জনপ্রিয় ডাক বিভাগ এখন প্রায় নির্জিব হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
নাইক্ষংছড়ির প্রধান ডাকঘরই ছিল পার্বত্য এই জনপদের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এ কারণেই নাইক্ষংছড়ির ডাক বিভাগসহ প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে শাখা ডাকঘর স্থাপিত হয়। পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সাধারণ জনগণের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এসব ডাকঘর।
জানা গেছে, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রসারের কারণে সে কালের ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের এখন আর তেমন আগ্রহ নেই।
ডিজিটাল প্রযুক্তির কারনে এখন জনগণ অতি দ্রুত দেশ-বিদেশের খবরা খবর আদান-প্রদান করতে পারছে। বর্তমানে বহুল প্রচলিত ইন্টারনেট, মোবাইল, ই-মেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত সবকিছু জানা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ডাক বিভাগের কার্যক্রম দিন দিন বিলুপ্তির পথে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একমাত্র ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার জালাল উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, বাংলালিংক নেটওয়ার্কের কারণে ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার (ইএমইএস) সার্ভিস এর অব্যবস্থাপনা জনিত পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্ট অফিস গুলি গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ শত গ্রাহকগণ ইএমইএস বাংলালিংক নেটওয়ার্কের কারণে সাধারণ জনগণ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, পোস্ট অফিসে টাকা পাঠাতে ১ হাজার টাকায় মাত্র ৫ টাকা খরচ। পাশাপাশি এখানে রয়েছে আরও অনেক সুবিধা ডাক জীবন বীমাও। ১০, ১৫, ও ২০ বছর মেয়াদি বীমা সেবা। চিঠি পত্র বর্তমানে দৈনিক ৫০ টি পর্যন্ত আদান প্রদান হয়ে থাকে বলেও তিনি জানান।
তবে আগেকার আমলে প্রতিদিন কয়েকশত চিঠি এবং কয়েক লক্ষ টাকা আদান প্রদান হত। ডাক টিকেট, খাম বিক্রি হত প্রচুর। প্রতি মাসে রাজস্ব আদায় হত লাখ টাকা। এখন আর সেদিন নাই।
পার্বত্য অঞ্চলের ডাকবিভাগ সমূহে বাংলালিংক নেটওয়ার্ক কার্যক্রম চালু করা হলে এ বিভাগ থেকে সরকার রাজস্ব আয় করতে পারত। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, ডাক বিভাগকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করা না হলে এ বিভাগটি অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান ডাকবিভাগকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নতি করনের বিযয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, নেটওয়ার্ক কার্যক্রম দ্রুত ব্যবস্থাসহ ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার (ইএমইএস) সার্ভিস চালুর বিযয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: শফিউল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার পোষ্ট অফিসকে ডিজিটাল পদ্ধটিতে রূপান্তর করেছেন। পোষ্ট অফিসে গুরুত্ব এবং সুযোগ সুবিধাগুলো বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারলে আগের ঐতিহ্যে ফিরে আনা সম্ভব হবে।
Discussion about this post