কক্সবাজার প্রতিনিধি:
চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে জোর তদবিরে ব্যস্ত একদল বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী। গত ৮জুলাই চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। বিলুপ্ত হওয়ার দুমাস পার হলেও এখনো কমিটি দিতে পারেনি জেলা ছাত্রলীগ।
ওই সময় পদ প্রত্যাশিদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহ্বান করা হয়। এছাড়াও কয়েকজন বিবাহিত, মাদক ব্যবসায় জড়িত, মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট ও কিশোর গ্যাং লিডার ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অনেকের নেই ছাত্রত্বও।
চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পদ পেতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন, তারেকুল ইসলাম রাহিত, হুমায়ন কবির হিরু, সবুজ চৌধুরী ও আরহান মাহমুদ রুবেল। পৌরসভা ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে জোর লবিং করছেন রিফাইয়েত হাবিব, ইত্তেহাদুল ইসলাম সুজন ও সাইফুল ইসলাম রানা।
পদপ্রত্যাশি ছাত্রলীগের নেতাদের বিষয়ে এই প্রতিবেদকের হাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। নিচে ছাত্রলীগের নানা অপকর্মের তথ্য হাতে এসেছে।
তারেকুল ইসলাম রাহিত : চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের দীর্ঘ ১২বছর ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও যত সুনাম রয়েছে, তাঁর চেয়ে বেশী রয়েছে দুর্নাম। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। তিনি বিবাহিত দুই সন্তানের জনক হয়েও ছাত্রলীগের পদ পেতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হুমায়ন কবির হিরু : তিনি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন। সেই কমিটির দায়িত্বপালনকালে তাঁর ইয়াবা সেবনের একটি ছবি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ, চকরিয়া পৌরসভা মেয়র আলমগীর চৌধুরীর শ্যালক হিরু। শ্যালককে ছাত্রলীগের নেতা বানাতে লাখ টাকার মিশনে নেমেছেন তিনি। এছাড়া পৌরসভা কর্মচারি ও তাঁর ব্যক্তি সহকারী শেফায়েত হোসেন ওয়ারেছীর বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে।
আতাউর রহমান সুবজ: ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আতাউর রহমান সুবজ ওরফে সুবজ চৌধুরীও সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। পাথরের ব্যবসাও করেন। তাঁর বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখল-বেদখল, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার হাত ধরে তিনি রাতারাতি ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার মিশনে নেমেছে।
বেশ কয়েকবছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন তরুণীর সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবি ভাইরাল হয়। এছাড়াও ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের কোনো রাজনীতি করেননি বলে জানা গেছে। শিবিরের নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন।
আরহান মাহমুদ রুবেল: চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আরহান মাহমুদ রুবেল নানা কারণে ছাত্রলীগে বিতর্কিত। ২০১৯সালের ২৭এপ্রিল প্রকাশ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের তারেকুল ইসলাম রাহিতকে হামলা করে রুবেলের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করে। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়েও রয়েছে তুমুল অভিযোগ। যেসব নেতা পদ পেতে মরিয়া হয়ে কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছেন তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক কারবার, বিবাহিত ও ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
রিফাইয়েত হাবিব: চকরিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের পদ পেতে হাবিব কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কাছে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। নিজেকে ছাত্র দাবি করলেও তিনি মুলত একজন ব্যবসায়ী।
চকরিয়ায় বিগত কোনো কমিটিতে হাবিব পদে ছিলেন না। মূলত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের রুমমেট হওয়ার সুবাধে পদ পেতে তিনি তদবির চালাচ্ছে। চকরিয়া মহিলা কলেজের অদূরে তাঁর ভাই ও নিজের যৌথ একটি রড ও সিমেন্টের দোকান রয়েছে। সেখানে নিয়মিত বসেনও তিনি।
তৃণমুল ছাত্রলীগের নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে কোনো ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবী ছাত্রলীগের পদ নিতে পারবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু হাবিবের মতো একজন ব্যবসায়ী পদ পেতে টাকা নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতাকে ম্যানেজ করেছে।
সাইফুল ইসলাম রানা: তিনি একজন পেশাদার ব্যবসায়ী। নিমার্ণ টের্ড্রাসের নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সাদ্দাম ও মারুফ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে নেতৃত্বে আসার পর তিনি রাতারাতি নেতা হওয়ার দৌঁড়ে নামেন। ব্যবসার অঢেল টাকা ছিটাচ্ছেন নেতাদের পেছনে। অভিযোগ উঠেছে এক সময় মাদকাসক্ত হওয়ায় তাকে তাঁর পরিবার মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখেন।
ইত্তেহাদুল ইসলাম সুজন: জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় নেতা হওয়ার দৌঁড়ে তিনিও এগিয়ে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের পাহাড়। সুজন বিবাহিত হলেও তথ্য গোপন করে পদ পেতে লবিং করছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ আছে তাঁর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, এখন ছাত্রলীগের আগের মতো তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীরা স্থান পায় না। টাকার বিনিময়ে হঠাৎ এসে পদ পেয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দখল করে। চকরিয়ায় গত ৮বছরে ভালো নেতৃত্ব পায়নি। উপজেলা ছাত্রলীগের কোনো কমিটি পূর্ণাঙ্গও করতে পারেনি। মাত্র পৌরসভার একটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পেরেছে। আমরা চাই রাজপথের ত্যাগী নেতারা এবার চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা কমিটিতে স্থান পায়।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপর নির্ভরকরে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে কমিটিতে কোন অ ছাত্র বিবাহিত মাদক ব্যবসায়ীর স্থান পাওয়ার কোন সুযোগ নাই।
Discussion about this post