নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গ্রাম-গঞ্জের ১৮ টি ইউনিয়নে বইছে ইউপি নির্বাচনের প্রবল হাওয়া। নতুন ও পুরাতন প্রার্থীদের পদভারে যেন মুখরিত ১৬২টি গ্রাম। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ঘোষনায় প্রচার-প্রচরণায় সরকারি দল সমর্থিত সম্ভাব্য স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা চোখে পড়ার মত।
প্রথম দফায় নির্বাচনী তফশীল ঘোষনার পর কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপকূল এলাকার ৭ ইউনিয়ন সহ মোট ১৮ ইউনিয়নে মাঠচষে বেড়াচ্ছেন প্রায় ২শতাধিক প্রার্থী। প্রতিদিন উঠান-বৈঠকসহ ছোট ছোট পথসভা ও জনসভা আকারে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আগে থেকেই মনজয়ের চেষ্টায় বিভোর তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান। বিগত নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এখানে আসন্ন নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেতে মরিয়া অর্ধডজন প্রার্থী। দারুচ্ছালাম রফিক, জাহেদুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, পরিমল বড়ুয়া, মুজিবুর রহমান বাদশা মিয়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আজিম উদ্দিন আহমদ, ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও মহিলা নেত্রী জাহান আরা উল্লেখযোগ্য প্রার্থী।
এছাড়া স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বাবর, ছাবের আহমদ ছাবুল হক মেম্বার ও মাস্টার কাজী শোয়াইবুল ইসলাম। বরইতলী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল সিকদার, তিনি বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান।
আসছে নির্বাচনেও তিনি লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা টিকেট নিয়ে বিগত নির্বাচনে হেরে যাওয়া সাবেক চেয়ারম্যান এটি এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জিয়া এবারও তিনি লড়তে চান নৌকা নিয়ে। তবে নৌকার টিকেট পেতে এখানেও মরিয়া একাধিক ব্যক্তি। উল্লেখযোগ্যরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে কালা নজরুল ও নিয়াজুল ইসলাম বাদল। তিনি পর পর দুবারের মেম্বার।
কৈয়ারবিল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান মক্কি ইকবাল। বিগত নির্বাচনে বিদ্রেুাহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ চৌধুরীকে পরাজয় করেছিলেন তিনি। মক্কি ইকবাল আসন্ন নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এ ইউনিয়নে নৌকার টিকেট পেতে তদবীর চালাচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজ আহমদ চৌধুরী ও আফজাল চৌধুরী।
আফজাল চৌধুরী নৌকা না পেলেও শক্তশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষনা দিয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন ইসলাম নগরগ্রামের মামুন। তিনি নির্বাচন করতে প্রবাস জীবন ছেড়ে এসেছেন এলাকায়।
কাকারা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সওকত উসমান। তিনি বিগত নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া, পাশাপাশি আরেক আওয়ামীলীগ নেতা শাহাবউদ্দিনও পেতে চান নৌকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে ঘোষনা দিয়েছেন ২নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইসমত ইলাহী।
লক্ষ্যাচর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা গোলাম মুস্তফা কাইছার, আসছে নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন বলে প্রচারনায় এগিয়ে তিনি। পাশাপাশি নৌকার টিকেট নিয়ে ভোট করতে প্রচারে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আওরঙ্গ জেব বুলেট, সাইকুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা আবছারউদ্দিন মাহমুদ ও দাদা উসমান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এখন মাঠ চষছেন সাবেক চেয়ারম্যান নুরমোহাম্মদ মানিক ও মুক্তার আহমদ মেম্বারসহ ১১ সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। সুরাজপুর-মানিক ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধ হতে পারে বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ও রুস্তম গণি মাহমুদের মধ্যে। দু‘জনই আওয়ামীলীগ নেতা। বিগত নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিয়ে বিজয় হন আজিমউদ্দিন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রুস্তম গণি মাহমুদ, তবে এবার তিনি নৌকার টিকেট নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বমুবিল ছড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান মতলব, তিনি ধানের শীষের টিকেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলন। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি দলীয় টিকেট ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়তে পারেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। এ ইউনিয়নে নৌকার টিকেট পেতে চেষ্টা করছেন জেলা পরিষদ সদস্য সুলতান আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা কফিল উদ্দিন ও দন্ত চিকিৎসক মিজানুর রহমান মিজান।
ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে নৌকার টিকেট নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী। আগামীতেও এখানে তার বিকল্প নেই বললে চলে। তাই আসছে নির্বাচনে তিনিই হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একঝাঁক লোকের নাম শুনা গেলেও প্রকাশ্যে মাঠে আসছেনা কেউই।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী নুরুল আমিন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান। আগামীতেও লাঙ্গল নিয়ে লড়তে চান তিনি। অন্যদিকে নৌকার টিকেট নিতে মরিয়া যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর, কলিমউল্লাহ কলি ও শাহনেওয়াজ।
তারা তিনজনই নৌকার টিকেট পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ করছেন বলে জানাগেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্র নেতা এম আর মাহবু লড়তে প্রচার চালাচ্ছেন বলে জানাগেছে।
খুটাখালী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আবদুর রহমান। আসছে নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানাগেছে। এখানে নৌকার টিকেট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও বাহাদুর শাহ। চিরিঙ্গা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন। তিনি নৌকার টিকেট নিয়ে চেয়ারম্যান হন এখানে। আগামীতেও তিনি নৌকার টিকেট পাবেন বলে শতভাগ আশা তার।
তবে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী বিগত নির্বাচনে বিদ্রেুাহী প্রার্থী ছিলেন। আসছে নির্বাচনেও নৌকা না পেলে বরাবরের মতই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার-প্রচারণায় তিনি তুঙ্গে।
উপকূলের ইউনিয়ন বদরখালীতে নৌকা পেতে মরিয়া সাবেক চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ, তার ভগ্নি পতি সাবেক চেয়ারম্যান মো: আলী চৌধুরৗ ও ভুট্টো সিকদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়বেন বর্তমান চেয়ারম্যান খাইরুল বশর ও এহাসানুল কাদের সাব্বির।
কোনাখালী ইউনিয়নে নৌকার টিকেট নিয়ে পর পর দুবার নির্বাচিত হন বর্তামান চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম সিকদার, সামনেও তিনি নৌকার টিকেট পাবেন বলে শতভাগ আশায় রয়েছেন। নৌকার টিকেট পেতে আরও যারা মরিয়া তারা হলেন-মক্তার আহমদ মেম্বার, টিপু সুলতান ও জাফর আলমসহ অর্ধডজন আওয়ামীলীগ নেতা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগ থেকেই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন শেভরণ চকরিয়া শাখাল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: নুরুল কবির, জাতীয় পার্টি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের মানিক।
সাহারবিল ইউনিয়নে নৌকা টিকেট নিয়ে বিগতবার নির্বাচিত হওয়া মহসিন বাবুল ছাড়াও নৌকা পেতে অর্ধডজন লোক মরিয়া, তাই মাঠে নেমেছেন, জেলা পরিষদের সদস্য আবুতৈয়ব, নবী চৌধুরী ও নাজেমউদ্দিন সওদাগর। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়তে চাইছেন আর কে নুরুল আমিন চৌধুরী।
পূর্ব বড়ভেওলায় বর্তমান চেয়াম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল, ধানের শীষ নিয়ে বিগতবার তিনি জয় হয়েছিলেন। আসছে নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন বলে জানাগেছে। বিগত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন-খলিল উল্লাহ চৌধুরী, আসছে নির্বাচনে তিনি সহ অর্ধডজন ব্যক্তি নৌকার টিকেট পেতে মরিয়া সাবেক চেয়াম্যান ইব্রাহিম খলিল ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত নাছিরউদ্দিন নোবেলের স্ত্রী ফারহানা আপরিণ মুন্না, কামরুজ্জামান সোহেল।
বিএমচরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করে চেয়ারম্যান হন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নৌকার টিকেট নিয়ে নির্বাচন করা সাবেক চেয়ারম্যান বদিউল আলমকে পরাজয় করেছিলেন। বর্তমানেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়তে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নড়া-চড়া খুবই ক্ষীন।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু, বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে বিজয় হয়েছিলেন তিনি। নৌকা প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান রুস্তম গণি মাহমুদকে পরাজয় করে বিজয় হন তিনি। রুস্তম গণি মৃত্যবরণ করায় তার স্থলে মঈনু মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তি নৌকার টিকেট পেতে চেষ্টা চালাতে শুনা গেলেও মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না তাদের।
পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সিরুজুল ইসলাম বাবলা, বিগত নির্বাচনে নৌকার টিকেট নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এবারও তিনি নৌকার টিকেট পাবেন বলে শতভাগ আশাবাদি। এছাড়াও নৌকা পেতে চেষ্টা করছেন সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা শাহাবউদ্দিন ও এডভোকেট রবিউল এহসান। তবে এখানে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে উল্লেখযোগ্য কারও নড়াচড়া নেই বললে চলে।
অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রার্থী সরকারি দল সমর্থিত। স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা তারা অনেকটা বিদ্রেুাহী প্রার্থীর ন্যায় বললে চলে। চকরিয়া উপকূলীয় ৭ ইউনিয়নসহ ১৮ ইউনিয়নে সম্ভাম্ব্য দু‘শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীদের সংখ্যা নগন্য বললে চলে।
Discussion about this post