যথাসময়ে আজমীর নিউ দিল্লি শতাব্দী রেল গাড়িটি (গাড়ি নং১২০১৬) জয়পুর স্টেশনে এসে পৌছাল। ট্রেনটি বিকাল তিনটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিটে আজমীর রেল জংশন ছেড়ে কিষাণগড় হয়ে জয়পুরে এসে পৌছাল বিকাল পাঁচটা বেজে চল্লিশ মিনিটে। আমরা কিছুটা আগেই রেল স্টেশনের ওয়েটিং রুমে পৌছালাম। ভারতীর রেলের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ মিনিটের মধ্যে জয়পুর স্টেশনের সকল যাত্রী উঠানো নামানোর কাজ সেরে পাঁচটা বেজে ঠিক পয়তাল্লিশ মিনিটে ট্রেনটি ঐ স্টেশন ছেড়ে যাবে।
অপেক্ষামান অন্যান্য যাত্রীদের সাথে আমরাও দ্রুত বেগে ট্রেনের নির্দিষ্ট কামরায় উঠে আমাদের সিটে গিয়ে বসলাম। মাথার উপরের ক্যারিয়ারে আমাদের সঙ্গে থাকা লাগেজ রাখা হলো। ট্রেনের বগি এবং উপরে মালামাল রাখার জায়গা তুলনামূলক বড় থাকার ফলে কেউ বড় ব্যাগ বা লাগেজ নিয়ে উঠলেও রাখা নিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়না। আমাদের পাশের সিটে এক মহিলা যাত্রী বড় লাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠলে ট্রেনের লোকজনকেই উনার বড় লাগাজ উঠানোর নামানোর কাজে হেল্প করতে দেখলাম।
আজমীর শতাব্দী এক্সপ্রেসে সব থেকে বেশি যাত্রী উঠল জয়পুর স্টেশন থেকেই যদিও ট্রেনটি আজমীর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসে প্রকৃত পক্ষে এই রোডে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরকেই সবথেকে ব্যস্থ শহর মনে হলো। আজমীর থেকে নিউ দিল্লি পর্যন্ত ট্রেনটি মোট দশটি স্টেশনের প্রতিটিতে মাত্র দুই মিনিটের জন্য থামে যাত্রী উঠানো নামানোর জন্য।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ট্রেনটি প্রতিটি স্টেশনে নির্ধারিত সময়ই পৌছাল। জয়পুর স্টেশন এক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম এই স্টেশনে ট্রেনটি পাঁচ মিনিটের জন্য থামে। নির্ধারিত প্রতিটা স্টেশন থামার পূর্বে যাত্রীদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে গাড়ির মাইকে হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় সংশ্লিষ্ট স্টেশনের নামও বিরতি কাল বলে দেওয়া হয়।
একই ভাবে ট্রেন ছাড়ার পরপরই নতুন আরোহীদের ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে স্বাগতম জানানো হয়।মোলায়েম নারী কন্ঠে ঘোষণাটি বারংবার শুনলেও বিরক্তি লাগেনি।তাছাড়া রেল এর সাউন্ড সিস্টেমও বেশ স্পষ্ট ও জোরালো শোনাচ্ছিল।
ট্রেনের টিকেটের সাথে সৌজন্য হিসাবে প্রতিজন যাত্রীকে দেওয়া হলো হাফ লিটার মিনারেল ওয়াটারের বোতল, দুই স্লাইজের এক প্যাকেট ব্রাউন রুটি, বৈকালি নাস্তার প্লেট এতে আমিষ আর নিরামিষ ভোজিদের জন্য আলাদা মেন্যু দেওয়া হলো। সাধারণত ভেজ আর ননভেজ এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য পার্থক্য হলো মুরগীর মাংস আর পনির।
ননভেজদের মেন্যুতে রান্না করা মুরগী মাংস কিংবা চিকেন রোল দেওয়া হয় আর ভেজ বা নিরামিষ ভোজিদের জন্য সে জায়গায় পনির রান্না কিংবা ভেজিটেবল রোল দেওয়া হয়।সাথে প্যাকেট চাও পরিবেশন করা হয় প্লাসিটিকের কাপে। ফ্লাস্কের গরম পানি আর পূর্বে সরবরাহকৃত খালি কাপ, দুধ চিনিসহ চা প্যাকেট। দুধ চিনি মেশানোর জন্য চা প্যাকেটের ভিতরেই দেওয়া হয় আইসক্রিমের কাঠির মত এক ধরণের কাঠি। চা নাস্তা খেতে খেতে গাড়ি প্রায় অনেকদূর আগাল এর মধ্যে আবার পরিবেশিত হলো ডিনার প্যাকেট।খাদ্য সরবরাহকারী সিট নাম্বার দেখে ভেজ কিংবা নজভেজ আলাদা প্যাকেট দিয়ে দিলেন।
উল্লেখ্য ভারতীয় ট্রেনে টিকেট নেওয়ার সময়ই মেন্যু বাছাই করে ঠিক চিহ্ন দিতে হয়। পরবর্তীতে ট্রেন যাত্রার কয়েক ঘন্টা পূর্বে তারা চার্ট রেডি করে এবং সংশ্লিষ্ট সকল যাত্রীদের টিকেট কনফার্মেশনের মত মেসেজ দিয়ে চার্ট তৈরির বিষয়টিও জানিয়ে দেওয়া হয়।গাড়ি ইতিমধ্যে আলওয়ার, রেওয়ারী পার হয়ে গুরুগাও স্টেশনে চলে আসছে। গুরুগাও স্টেশনে অনেক যাত্রী নামল, এটি আইটি সেক্টরে ক্ষেত্রে বিশেষে দিল্লি চেয়েও বেশ খ্যাত শহর।
ভারতীয় বড় বড় অনেক কোম্পানি হেড অফিসও এখানে অবস্থিত। ভারতীয় মোবাইল কোম্পানি এয়ারটেল এর হেড অফিসও এই গুরুগাওয়ে অবস্থিত।
১৮ এপ্রিল-২০২২ইংরেজি তারিখ রাত আনুমানিক দশটা বেজে ত্রিশ মিনিটে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থল নিউ দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পৌছায়। জয়পুর থেকেই আমাদের জন্য দিল্লিতে হোটেল বুকিং করা করা ছিল।
জয়পুরে হোটেল মাউন্ট ভিউ’র আতিথেয়তায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পরিচালিত হোটেল পাম ডি’ওর (বুটিক হোটেল) এ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। রুম ভাড়াও নিবে ঠিক জয়পুরের সমান আঠারশ রুপি। হোটেলটির অবস্থান নিউ দিল্লি রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক উল্টো দিকে দেশবন্ধু গুপ্ত রোডের শুরুতে। পাহারগন্জ ফ্লাইওভারের পাশে হওয়ায় আমরা স্টেশন থেকে বের হয়ে পায়ে হেটেই হোটেলে পৌছায়।
ঐ রাত আমরা দিল্লিতে অবস্থান করি। জয়পুরের মত ভালো সার্ভিস এই হোটেল আমাদের দিতে পারেনি, এমনকি আমার ছেলে জারিফের আচরণেও বুঝতে পারলাম তাঁরও বেশি পছন্দ হয়নি হোটেলটি। এটি পাহাড়গন্জ এলাকার মুটামুটি মানের অন্য দশটি এসি হোটেলের মতোই মনে হলো। ট্রিমরুমস নামক একটি কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন পর্যটক এলাকায় এই হোটেলগুলো পরিচালনা করেন। তাদের পরিচালিত হোটেল উপল ইন্টারন্যাশনাল নামক আরেকটি হোটেল পাহাড়গন্জের আরাকাশান রোডে আছে তবে ঐদিকে রাস্তা সংস্কারের কাজ চলমান থাকায় আমরা আর হোটেল চেঞ্জ করিনি।
যাইহোক আসার পথে ট্রেনে পরিবেশিত ডিনার প্যাকেটেই আমাদের রাতে ভূরিভোজ হয়েগেল।
আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা পর দিন চলে যাবো পান্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশের যৌথ রাজধানী চন্ডীগড়।
আজমীর আসা যাওয়ায় ট্রেন সার্ভিস ভালো লাগাই আমরা আবারো ট্রেনে ভ্রমণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
হোটেলে চেক ইন করে রুমে উঠতে প্রায় রাত সাড়ে এগারটা বেজে গেল ফলে ঐ রাতে আর ট্রেনের টিকেট কিনতে বের হয়নি। তাছাড়া বাইরে গরম ছিল বেশ।আপাতত রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে কিছু ডলার ক্যাশ করাতে হবে আর দিল্লি থেকে চন্ডীগড় যাওয়ার ট্রেনের টিকেট কাটতে হবে।
চলবে…
লেখক: জিয়াউর রহমান মুকুল
উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি)
শেড, কক্সবাজার।
ইমেইল: [email protected]
Discussion about this post