মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গা শরনার্থীদের তৃতীয় টিমের প্রথম গ্রুপ চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ৮৫০ জন এবং রাত ৮ টার দিকে ১ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর শাহীন স্কুলে ট্রানজিট পয়েন্টে পৌঁছায়। ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তাদের জাহাজে তোলা হবে। ২৯ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানান্তরের জন নিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীর এ সংখ্যা কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুত্রটি।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ২২ টি বাসে করে ৮৫০ জন এবং বেলা ২ টার দিকে ২৬ টি বাসে করে ১ হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী উখিয়া ডিগ্রি কলেজের মাঠ থেকে ভাসানচরে যেতে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে যাত্রা করে। পথের নিরাপত্তায় ও আপদকালীন সংকট মোকাবেলায় বিকল্প হিসেবে আরো একটি করে খালি বাস বহরে সংযুক্ত রাখা হয়। সাথে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মালপত্র বহন করছে আর বেশ কয়েকটি ট্রাক।
এসব রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছে। শুক্রবার ২৯ জানুয়ারী কক্সবাজার থেকে যাওয়া ১৮৫০ জন রোহিঙ্গার দলটি ভাসানচরে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাদের বিভিন্ন শরনার্থী ক্যাম্প থেকে বাসে করে এনে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এর মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য নিবন্ধনের কাজও চলছে সেখানে।
শুক্রবার ২৯ জানুয়ারী আরো ১৫০০ রোহিঙ্গা শরনার্থী ভাসানচরে যেতে চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এটি হবে তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গা শরনার্থী স্থানান্তরের তৃতীয় গ্রুপ। তাদের অধিকাংশকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্যাম্প থেকে ট্রানজিট পয়েন্ট উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়েছে। অবশিষ্টদের শুক্রবার সকালে আনা হবে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ থেকে ভাসানচরে এটি হবে তৃতীয় দফায় এবং বৃহৎ সংখ্যায় রোহিঙ্গা শরনার্থী স্থানান্তর।অপরদিকে, কক্সবাজার থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসনচরে গ্রহনের জন্য সেখানকার কর্তৃপক্ষ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান সুত্রটি।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী এবং গত ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৮০৪ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ৩ হাজার ৬৪৪৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছায়। দ্বিতীয় দলটিকে ভাসানচরে নেওয়ার ঠিক এক মাস পরে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দলটি সেখানে যাচ্ছে।
তৃতীয় দফায় দুইদিনে রোহিঙ্গাদের বিশাল বহর স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে।
উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে স্থানান্তর করার টার্গেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সুত্রমতে, আগামী ফেব্রুয়ারীর শেষদিকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আরো একটি দল উখিয়া-টেকনাফ এর শরনার্থী ক্যাম্প থেকে চতুর্থ দফায় ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে নোয়াখালীর ভাসানচরকে দেশের ৬৫০ তম পূর্ণাঙ্গ একটি থানা হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইতিমধ্যে উদ্বোধন করেছেন।
Discussion about this post