বিশেষ প্রতিনিধি :
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা একজন শীর্ষ দালাল ও সাবেক একজন সার্ভেয়ারকে আটক করেছে দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সুত্রে জানা গেছে, দুর্ণীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে।
শনিবার বিকাল ৪ টায় চট্রগ্রাম জিইসি মোড়স্থ এমইএস কলেজ গেইট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা র্কাযালয়-২-এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।
আটক দালাল মুহিব উল্লাহ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের রুপপতি গ্রামের ফরিদ আহমেদের ছেলে এবং কেশব লাল দেব কক্সবাজার এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার। আটক সার্ভেয়ার বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় (এলএ শাখা) কর্মরত।
দুদক সুত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি র্যাব অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ ৯৩ লক্ষ টাকা সহ আটক করে। এরপর দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধানে নামে। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দালালদের সিন্ডিকেটটি তৈরি হয়েছে। এসব দালাল জমির মালিকদের নাম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জানা গেছে, আটক সার্ভেয়ার কেশব কক্সবাজার এল এ শাখার এলএ মামলা নং- ৭/১৩-১৪ খ্রিঃ এবং ২/১৩-১৪ খ্রিঃ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের শাখা -০৩ এর দায়িত্বে ছিলেন। উক্ত ০৩ নং শাখায় কর্মরত সার্ভেয়ার ছিলেন আটক হওয়া কেশব লাল দেব। সেই সুবাধে দালাল মুহিব উল্লাহর নেতৃত্বে একটি দালাল সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে অবৈধ টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন। এমনকি মামলায় বিরোধীয় জমি, বিক্রিত জমির মালিক কে মালিক সাজিয়ে রাতের আধারে কলাতলী হোটেলে ও হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকায় একটি বাসায় ইচ্ছেমত চেক বিতরণ করেন। তারা হাতিয়ে নেয় কমিশনের নামে ৩০- ৫০ ভাগ অংকের কোটি কোটি টাকা।
এসব দালাল সিন্ডিকেটের দাপটের কাছে অসহায় ছিল ক্ষতিগ্রস্থ সাধরণ জমির মালিকগণ। উক্ত সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী ২ সদস্যকে দুদকের গ্রেফতারের খবরে স্বস্থির নিঃশ^াস ফেলছে অনেক সাধরণ জমির মালিক। তারা দুদকের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে ভুমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণ এর অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত সকল দালাল ও কর্ম্কর্তা কর্মচারিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবি জানিয়েছে।
দুদক সুত্রে আরো জানা যায়, সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব ক´বাাজার এলএ শাখায় থাকাকালীন সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে ভূমি অধিগ্রহণ কাজে মুহিব উল্লাহসহ অর্ধশতাধিক দালাল ও সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন।
এছাড়াও কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত দালালদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতেও মুহিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার কেশব লাল দেবের নাম উঠে আসে। তাদের এসব দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে দুদক।
প্রসঙ্গত গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছড়া এবং বাহারছড়া এলাকা থেকে ঘুষের ৯৩ লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার ওয়াসিমকে আটক করা হয়। এরপরই অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও আর্থিক লোটপাট প্রকাশ্যে আসে। এরফলে ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার ৩০ কর্মকর্তাকে এক আদেশে শাস্তিমূলক বদলি করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ছিলেন জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত ১৯ জন সার্ভেয়ার, সাতজন কানুনগো ও চারজন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা।
Discussion about this post