কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাবার পথে নাফনদীর তীরে জাদিমুরা গ্রাম। সেখানকার একটি পাহাড়ের চুড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রাচীন একটি জাদি কিংবা প্যাগোড়া। একসময় এটিই ছিল টেকনাফের একমাত্র প্যাগোড়া, যেখানে চলত বৌদ্ধসম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্টান ও উৎসব আয়োজন। পাহাড়চুড়ার এই জাদিতে ওঠতে হয় খাড়া সিড়ি ডিঙিয়ে। চুড়ায় ওঠলে দেখা মেলে সৃষ্টির অকৃতিম সৌন্দর্য।
প্যাগোড়ার পূর্বপাশে নাফনদী, তারপর মিয়ানমার সীমান্ত এবং রাখাইন রাজ্য। দক্ষিণদিকে নেটং (দেবতার পাহাড়) ও স্থল বন্দর, পশ্চিমে পাহাড়সারি এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবির এবং উত্তর দিকে লবণমাঠ ও জনবসতি। প্যাগোড়ার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় বিশাল এক বটবৃক্ষ। যার বয়স দুইশত বছর। প্যাগোড়ায় এখন ধর্মীয় আনুষ্টানিকতা হয়না বললে চলে। তবে মাঝে মধ্যে পর্যটকের পা পড়ে এই জাদিতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর নাকি প্যাগোড়া এলাকায় বখাটে এবং মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। যে কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াত সীমিত হয়ে পড়ে। প্যাগোড়ায় গায়ে নানা কথামালা। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার উক্তি। এখন নামকরণ হয়েছে ভালোবাসার প্যাগোড়া।
জনশ্রুতি রয়েছে, শত বছর আগে এই জাদিতে দেখা হয়েছিল টেকনাফের মগ জমিদার কন্যা মাথিনের সাথে কলকাতার পুলিশ কর্মকর্তা, সাহিত্যিক ও অভিনেতা ধীরাজ ভট্টাচার্যের। এরপর দুইজনের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা। দুই জনের ঐতিহাসিক প্রেমকাহিনীর সাক্ষি টেকনাফ থানার অভ্যন্তরের ‘মাথিনকুপ’। ধীরাজ ভট্টাচার্য তখন টেকনাফ থানার পুলিশ অফিসার। পর্যটক টানতে জাদিমুরার প্রাচীন এই প্যাগোড়ার সংস্কার ও সংরক্ষণ জরুরি।
আমার সঙ্গে জাদির পাহাড়ে প্রথম আলো ঢাকা অফিসের একদল আলোকিত সাংবাদিক।
লেখক: আব্দুল কুদ্দুস রানা
বিশেষ প্রতিবেদক ও অফিস প্রধান,
কক্সবাজার। দৈনিক প্রথম আলো।
Discussion about this post