ধর্ম ডেস্ক :
গোনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম আমল নামাজ। এ নামাজের সঙ্গে ৩টি কাজ সম্পৃক্ত আছে। তা যথাযথভাবে আদায় করলে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন, মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। নামাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজ ৩টি কী? এ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনাই বা কী?
নামাজের জন্য ৩টি আমল করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। নামাজের জন্য বিশেষ এ ৩টি কাজ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার অনেক গোনাহ মাফের পাশাপাশি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না? যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপরাশি দূর করে দেবেন এবং মর্যাদা উঁচু করে দেবেন?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘হ্যাঁ’, অবশ্যই (বলবেন) হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেন-
- অসুবিধা ও কষ্ট থাকা সত্ত্বেও (নামাজের জন্য) পরিপূর্ণভাবে অজু করা।
- মসজিদে যাওয়ার জন্য বেশি পদচারণা করা।
- এক নামাজের পর অন্যনামাজের জন্য অপেক্ষা করা।
জেনে রাখ! এটাই হলো রিবাত।’ (মুসলিম)
রিবাত : এটি হলো নিজেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে আটকে রাখা ও শয়তানের মোকাবেলায় নিজেকে প্রস্তুত রাখা। যা অধিকাংশ ঈমানদার মানুষের জন্যই সহজ।
উল্লেখিত হাদিসের ৩টি কাজ জুমআর নামাজের জন্যও বিশেষ আমল। জুমআর নামাজের জন্য অজু ও গোসলের মাধ্যমে প্রস্তুতি নেয়াই হচ্ছে প্রথম কাজ। তারপর যথাসম্ভব বেশি পদচারণার মাধ্যমে মসজিদে যাওয়া। কেননা এ দিনের প্রতি কদমের জন্য এক বছরের নফল নামাজ ও রোজার সাওয়াব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিশেষ করে জুমআর দিন আসর থেকে মাগরিবের এ সময়টি অনেক ফজিলতপূর্ণ। যারা এ সময়টিতে নামাজে থাকবে তাদের জন্য রয়েছে স্পেশাল ক্ষমা পাওয়ার ঘোষণা। কিন্তু আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত নামাজে কীভাবে থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ‘আসরের পর মাগরিবের নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তির এ সময়টি নামাজের মধ্যেই গণ্য হবে। আর হাদিসে এ কথাই বলা হয়েছে যে, যারা এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকবে তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির ঘোষণা।
তাছাড়া জুমআর নামাজ আদায় করলেও গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। হাদিসের অন্য বর্ণনায় জুমআর দিন বান্দার গোনাহ মাফের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্ত উত্তমরূপে অজু করে, এরপর জুমআয় আসে, মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনে এবং নিরব থাকে, তার তখন থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি (অহেতুক) কংকর স্পর্শ করল অর্থাৎ খুতবা শোনার সময় কারো মনোযোগ নষ্ট করল; সে অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম)
জুমআর দিন আরও কিছু বাড়তি আমলের কথাও এসেছে হাদিসে-
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসলকরে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপরমসজিদে যায়, আর দুজনের মধ্যে ফাঁক না করে (যেখানে জায়গা পায় সেখানেই বসে যায়) আর তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ (সুন্নাত/নফল) নামাজ আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমআ এবং পরবর্তী জুমআর মধ্যবর্তী যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআসহ যে কোনো দিন হাদিসে বর্ণিত ৩টি কাজের মাধ্যমে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে নিজেদের গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়া এবং মর্যাদা বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করা। হাদিসে ঘোষিত আমলগুলোর মাধ্যমে গোনাহমুক্ত জীবন পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনের বিশেষ আমলসহ উল্লেখিত ৩টি কাজ যথাযথভাবে আদায় করার মাধ্যমে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Discussion about this post