ডেস্ক রিপোর্ট :
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিং ও সামাজিক অপরাধ দমনে আরও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৩ জানুয়ারি রবিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীতে ৩৭তম বিসিএসের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ধরণের অপরাধ দমনে কাজ করছে পুলিশ, এজন্য বাহিনীর নতুন নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে, জঙ্গি দমনেও ভূমিকা রেখেছে পুলিশ। অপরাধের ধরণ পাল্টেছে। সেসব মোকাবেলায় পুলিশকে সতর্ক হতে হবে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আপনারা জানেন যে আমাদের বাংলাদেশ পুলিশের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছিল। পুলিশরা তখন প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অনেক জীবন ক্ষয় হয়। তাদের সেই প্রতিরোধ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখে। যারা শাহাদাত বরণ করেছিল আমি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা এই পুলিশ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালের ৯ মে তিনি পুলিশের প্রথম প্রশিক্ষণ কুচকাওয়াজও পরিদর্শন করেন। একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে এত অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশকে ট্রেনিং দেয়া একটা বিরাট দায়িত্ব ছিল এবং তিনি সেটা করেছিলেন।
পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পুলিশকে জনগণের বাহিনীতে পরিণত করেছে তাঁর সরকার। দেশের থানাগুলোকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে বাহিনীটিতে। এ সময় সরকার প্রধান পুলিশ সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সময় তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রশিক্ষণের কথা তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের পুলিশের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে পুলিশের বাজেট ও জনবল ব্যাপকহারে বাড়িয়েছি। ২০০৯ সালে পুলিশের মোট বাজেট ছিল তিন হাজার কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পুলিশের মোট বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
সাইবার ক্রাইম নির্মূলে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অপ্রতিরোধ্য ভূমিকার মতো এখনও পুলিশ বাহিনী দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
অনুষ্ঠানে সশরীরে যেতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এটা খুব দুঃখজনক, সরকারে থেকেও এই প্রথম কুচকাওয়াজে সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। সেটাও করোনাভাইরাসের কারণে। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাসের কারণে একরকম বন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলে প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে আমি ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে পারছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা এটা করতে পারছি। কিন্তু আমার খুব আকাঙক্ষা ছিল সশরীরে উপস্থিত থাকার। সেটা হলো না বলে সত্যিই আমি খুব দুঃখিত। তারপরও নবীন অফিসারদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজকের নবীন কর্মকর্তারাও দেশের এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন প্রান্ত থেকে প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা হলেন- ‘বেস্ট শ্যুটার’ ও ‘বেস্ট ফিল্ড পারফর্মার’ মো. আবুল হোসাইন, ‘বেস্ট ইন হর্সম্যানশিপ’ মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম, ‘বেস্ট একাডেমিক’ ও ‘বেস্ট প্রবেশনার’ এ দুটিতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন স্নেহাশীষ কুমার দাস। প্যারেডে ১৩ জন নারী অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জাসহ অন্যান্য অতিরিক্ত আইজিপিবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী চত্বরে একটি করে গাছের চারা রোপণ করেন। এরপর তারা শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন।
Discussion about this post