মুহাম্মদ ফায়েজ:
এই সময়ে ফ্লাইট বুকিং খুবই সহজ একটি বিষয়, নিকটস্থ বুকিং সেন্টার অথবা পরিচিত বিমান কোম্পানির ওয়েবসাইটে ঢু মারলাম আর টিকেট করে নিলাম, শেষ। তবে যদি একটু সচেতন হয়, কিছু বিষয় খেয়াল করি অথবা আরেকটু সময় দেয় তবে ভ্রমণ হবে আরো আরামপ্রদ ও সাশ্রয়ী। এয়ার টিকেট বুকিং এর প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ধাপে ধাপে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রচলিত মিথ পরিহার করুন। মঙ্গলবারে ফ্লাইটের দাম কম থাকে এমন একটি মিথ প্রচলিত আছে, কিন্তু এটা শতভাগ সত্য নয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বছরের সবচেয়ে খরচে টিকেট টি মঙ্গলবারের হতে পারে।
প্রচলিত আরো একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কোন যাত্রী নিয়মিত একই তারিখে একই সময়ে একই রুটের ফ্লাইট খুজে সেক্ষেত্রে দাম বেশি দেখায়। তাই ইনকগনিটো ট্যাব ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে, এটাও ঠিক নয়। হতে পারে প্রথম দিনের পর এই ফ্লাইটে আরো টিকেট বিক্রি হয়েছে তাই দাম বেড়ে গেছে।
আজকাল বিমান কোম্পানি গুলো অনেক স্মার্ট এবং এটি সবচেয়ে স্মার্ট ব্যবসায়ের একটি। তাই তাদের ফ্লাইট সিডিউল, টিকেট দাম নির্ধারণের পদ্ধতিও অনেক স্মার্ট। লক্ষ কোটি উপাদানে টিকেটের দাম প্রভাবিত হয়। তাদের নির্ধারিত দামে কিভাবে সাশ্রয় করা যায় সে বিষয়ে আমরা সচেতন হতে পারি।
সাশ্রয়ী দামে টিকেট পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে ভ্রমণের দিন ও সময় বিচক্ষণতার সাথে নির্ধারণ করা। পরিকল্পনা করা উচিৎ বছরের কোন সময়টাতে আমি ভ্রমণ করব, ঐ সময়ের কোন সপ্তাহে ভ্রমণ করব এবং নির্দিষ্ট সপ্তাহের কোন দিন আমি ভ্রমণ করব। সময় নির্বাচন সঠিক হলে একজন ভ্রমণকারীর সর্বমোট খরচের অর্ধেকের বেশি অর্থ সাশ্রয় হবে।
বিভিন্ন উৎসবে স্থান ভেদে ভ্রমণের খরচ বেড়ে দ্বিগুণ থেকে ১০গুণে পর্যন্ত পৌছায়। নিউ ইয়ারে সিডনি কিংবা নিউইয়র্ক ভ্রমণের সিদ্ধান্ত আপনার জীবনের অন্যতম ভুল। ঈদ, মেরিক্রিসমাস, থ্যাংকস গিভিংডে সহ অন্যান্য উৎসবের মুহুর্ত গুলো পরিহার করা উচিৎ। বিশেষত যে উৎসব গুলো সপ্তাহ ধরে চলে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বাজেট ক্যারিয়ার নির্ধারণ। হাজার হাজার কোম্পানিতে শত রকমের অফার ও সুবিধা। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিছু সুবিধা ছেড়ে দেওয়া খুব নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে না। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ফ্লাইট ও ক্লাস পরিহার করা উচিৎ।
ঢাকা থেকে দিল্লির ফ্লাইট ২২ হাজার টাকায় যেমন যাওয়া যাবে চায়লে যাত্রী লাখ টাকাও খরচ করতে পারবে। তাই ইকোনমি ক্লাসে বাজেট ক্যারিয়ারের বিমানে টিকেট বুকিং সবচেয়ে সাশ্রয়ী। অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ একটি বাজেট ক্যারিয়ার। এয়ার এশিয়া, ভিসতারা, ইন্ডিগো, মালিন্দো এশিয়ার বাজেট ক্যারিয়ার।
একজন সাশ্রয়ী যাত্রী কখনোই সব সময় সরাসরি ফ্লাইট বুকিং করে না। ধরে নিলাম কোন যাত্রী আনকারা যাবে ঢাকা হতে, সেক্ষেত্রে সরাসরি আনকারার ফ্লাইট নাও পেতে পারে। কোন বিমানে একসাথে বুকিং করলে লম্বা একটা বিরতির সাথে অতিরিক্ত অর্থও খোয়াতে হবে। তাই বিরতি স্থল(হিডেন সিটি) এর টিকেট করা ও ওখান থেকে চুড়ান্ত গন্তব্যস্থলের টিকেট করা উত্তম। এতে করা সময় ও অর্থ দুটোই বেচে যাবে।
বিভিন্ন বিমান কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে বিশেষ প্যাকেজ বা দাম অফার করে থাকে, এই সমস্ত অফার একজন ভ্রমণকারীর জন্য দারুণ সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক হতে পারে। কেউ কক্সবাজার ঘুরতে যেতে চাচ্ছে ২ রাত ৩ দিনের জন্য। কোন কোম্পানি ২টি রিটার্ন টিকেটে(নিয়মিত দামে) ২ রাত ৩ দিনের হোটেল বুকিং পেয়ে গেল বিনা খরচে। এতে করে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে হলেও হোটেল বুকিং এ সাশ্রয়ী হলো।
একই কোম্পানির বিমানে রাউন্ড ট্রিপ করা অনেক সময় অতিরিক্ত খরচের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যাত্রীর গন্তব্যস্থলের স্থানীয় বিমানে ভ্রমণের চেষ্টা করুন। ফ্লাই দুবাইতে দুবাই যান, বাংলাদেশ বিমানে ঢাকা ফিরুন। একই ভাবে এয়ার এশিয়াতে কুয়ালালামপুর নামুন, ইউ এস বাংলাতে ঢাকা ফিরুন।
টাকায় বিমান টিকেট বুকিং করুন, অন্য কারেন্সির কনভার্ট ঝামেল এড়িয়ে চলুন। বাংলাদেশি টাকা ডলারের থেকেও দূর্বল হওয়াতে টিকেটের মূল্য কম এবং কনভার্ট চার্জ থেকেও মুক্ত থাকা যায়।
চায়লে যাত্রী একজন ট্রাভেল এক্সপার্টের সহযোগিতা নিতে পারে, সেক্ষেত্রে ট্রাভেল এডভাইজারের কাছে কত বেশি তথ্য আছে এবং সে নিজে কতটা এক্সপার্ট তার উপর নির্ভর করবে যাত্রী কত সাশ্রয়ী হচ্ছে।
লেখক: মুহাম্মদ ফায়েজ
ট্রাভেল এডভাইজার
এফ এন এফ ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস।
Discussion about this post