বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার শিশু। যাদের পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবার সম্পুর্ণটি দেখছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে আলোকিত খবর হলো এসব শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। যেটি তারা নিজ দেশে সহসায় করতে পারতেন না। সেটি এখন বাংলাদেশেই হচ্ছে।
‘সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস)’র ১৬২ শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশী। এছাড়াও উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের ৯ স্কুলে শিশুদের সুরক্ষা ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা নিরসনে কাজ করছে সংস্থাটি।
স্কাস সুত্রে জানা গেছে- ২০১৭ সাল থেকে তারা রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ইউনিসেফের সহযোগীতায় শুরুতে ৭ ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ৮টি ক্যাম্পের শিশুদের পড়ানো হচ্ছে। যেখানে ১৬২ শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থী ১১ হাজার ৬০০ জন। প্রত্যেক শিক্ষা কেন্দ্রে একজন বাংলাদেশী ও একজন রোহিঙ্গা শিক্ষক রয়েছেন।
স্কাসের ইউনিসেফ শিক্ষা প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে এলসি লেভেল-১ ও লেভেল-২ দুই ভাগে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। ৪ টা বিষয় নিয়ে যেমন -ইংরেজী, বার্মিজ, গণিত ও লাইফ স্কীল। কোভিট-১৯ চলাকালীন সময় হোম ভিজিটের মাধ্যমে এ শিক্ষা কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি। যাতে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।
এছাড়াও শিশু সুরক্ষা ও লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ব্লক ভিত্তিক ৫৫ টি কমিটি এবং ৩৪ টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করা হয়েছে। প্রতিমাসে এসব কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যাতে তারা ব্লকে শিশু সুরক্ষা এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু ও কিশোর-কিশোরী পাচার ও পারিবারিক সহিংসতা রোধের উপর সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
স্কাসের আরেক কর্মকর্তা আনোয়ার জাহেদ বলেন, শিশু সুরক্ষা এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু ও কিশোর-কিশোরী পাচার ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পে এসব প্রতিরোধে স্কাস কাজ করছে। যাতে ক্যাম্পের এসব ঘটনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
‘সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস)’র চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা ট্রোমাটাইজড। তারা নির্যাতন ও সহিংসতা দেখেছে। তাদের সামনেই তাদের মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে, শুরুতে তাদের মানসিক অবস্থা যতটা খারাপ ছিল, এখন আর ততটা নাই। তারা ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাদের নিয়ে মনোচিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকরা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে থাকছেন, মিশছেন। তাদের খেলাধুলাসহ নানা কাজের মধ্যে রাখা হচ্ছে।
তিনি জানান,‘ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের ভাষা, তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় এবং পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে আমাদেরই ১৬২ শিক্ষা কেন্দ্রে পড়াশোনা করছে এসব শিশুরা। এসব কেন্দ্রে এখনো শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার।
এছাড়াও শিশু সুরক্ষা এবং লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু ও কিশোর-কিশোরী পাচার ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান স্কাসের চেয়ারম্যান।
স্কাস চেয়ারম্যান আশা করেন, শিক্ষার উন্নয়নে এ প্রকল্পগুলো আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার করা হবে। যাতে রোহিঙ্গারা যতদিন মায়ানমার যেতে না পেরে অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থাকছেন ততদিন যেন তাদের শিশুরা পড়ালখা থেকে বঞ্চিত না হয়।
সে জন্য দাতা সংস্থার অর্থায়ন প্রয়োজনে আরো বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক সহযোগিতাও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্কাস চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার উন্নয়নে সরকার ও ইউনিসেফের টেকনিক্যাল সহযোগিতার জন্যও গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Discussion about this post