চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীর গাড়ি কেনার ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানার দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুই পুলিশ সদস্য হলেন- সীতাকুণ্ড থানার এসআই সাইফুল আলম ও সীতাকুণ্ড থানার ওসির বডিগার্ড কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মো. আবু জাফর নামে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানাধীন নিলোখিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার জহুরুল হকের ছেলের দায়ের করা মামলায় এই দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার বাদী গাজীপুর জেলার গাছা এলাকায় বসবাস করেন।
ডাকাতির অভিযোগে দায়ের করা ওই মামলায় দুই পুলিশ সদস্য ছাড়াও আসামি করা হয় পুলিশের তিন সোর্সসহ ৫ জনকে। তিন সোর্স হলেন- রিপন (৩৫) ও হারুন (৩৩) এবং গাড়িচালক রাজু (২৫)। তাদের তিনজনের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলায়।
মামলার বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর পিকআপ কেনার জন্য গাজীপুর থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন আবু জাফর। দরদাম না মেলায় পুনরায় বাড়ি ফেরার উদ্দেশে পৌরসভার বাসস্ট্যান্ডে টিকিট কেটে শ্যামলী বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করতে থাকেন তিনি। সেখানে দুইজন লোক তার পাশে এসে বসেন।
তারা আবু জাফরের কাছে কোন জায়গা থেকে এসেছেন জানতে চান। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন এসআই সাইফুল আলম ও সীতাকুণ্ড থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লার বডিগার্ড কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম। তারা দুজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আবু জাফরকে ইয়াবা ব্যবসায়ী উল্লেখ করে তার পেটে ইয়াবা আছে বলে ভয়ভীতি দেখান।
পরে আবু জাফরকে একটি গাড়িতে তুলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পেটে ইয়াবা আছে বলে এক্সরে করান। তার পেটে ইয়াবা না পেয়ে তাকে গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরানো হয়। একপর্যায়ে তার কাছে থাকা ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে তাকে ক্রসফায়ারের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকার একটি গাড়িতে তুলে দেয়া হয়।
কিন্তু ব্যবসায়ী আবু জাফর ঢাকায় না গিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করেন। চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারও বিষয়টি তদন্তের জন্য সীতাকুণ্ড সার্কেলের এডিশিনাল এসপি মো. আশরাফুল করিমকে নির্দেশ দেন। আশরাফুল করিম ঘটনার তদন্তে সত্যতা পেয়ে এসপিকে অবগত করলে তিনি ওই দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
এদিকে মামলার পরই অভিযুক্ত ওই দুই পুলিশ সদস্য পালিয়ে যান। পরে তারা থানায় এসে আত্মসমর্পণ করলে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এ ঘটনায় পুলিশের দুই তথ্যদাতা ও গাড়ির চালক পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তভার দেয়া হয়েছে। মামলার আসামি ২ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের মধ্যে দুইজন সোর্স ও একজন গাড়িচালক। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post