স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় কাজ করেন; আপনারা মিছিল করেন, মিটিং করেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আপনারা ভাঙচুর করবেন, জানমালের ক্ষতি করবেন, আহত করবেন তখন তো নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না। তাদের কাজই তো প্রটেকশন দেওয়া।
বৃহস্পতিবার রাজারবাগ সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি থাকা বুধবারের সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে সেটা আমরা মনে করি না। পরিস্থিতি সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, একঘেয়েমি ছেড়ে হয় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসুক, বিরাট সমাবেশ করুক, আমরাও দেখি, দেশবাসীও দেখবে; নয়ত তারা কালশী মাঠে যাক। এরপরও আলোচনা হতে পারে। তারা আসুক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসুক।
এসময় সাংবাদিকরা পুলিশের অ্যাকশনে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এছাড়া কোনো উপায় ছিল নাকি? পুলিশ যেভাবে মার খাচ্ছিল, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করেছে, ভাংচুর করা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ছবি আমরা দেখেছি। হামলা করেনি, সার্চ করেছে। ভাঙচুর হতে পারে, সমর্থকরা নিশ্চয়ই ধাক্কা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ত সেরকম হতে পারে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে পুলিশ ব্যাগে করে বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল নিয়ে গেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তাদের দেখে আসুন, তারা কি নিজেরা নিজেরা ককটেলে আহত হয়েছে? তারা মার খেয়েছে, ককটেলের হামলার শিকার হয়েছে।
ককটেলের মতো ছোট বিস্ফোরকে এত পুলিশ আহত হলো? পুলিশের কি তবে সক্ষমতা কমেছে? পুলিশের কি সক্ষমতা বাড়ানো দরকার? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ সবসময় মনে করে আসছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে ককটেল মারতে হবে। এমন কোনে ঘটনা ঘটেনি যে হামলা করতে হবে পুলিশের ওপর। পুলিশ সবসময় জনগণের পাশে থাকে, জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করে আসছে। পুলিশ এক্সপেক্টই করেনি হামলা হতে পারে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করেছে, নানা কথা বলেছে, সমালোচনা করেছে, আমরা কিছুই বলিনি। কোথাও বাধা আমরা দেইনি। বড় বড় সমাবেশ করেই তারা মন খুলে কথা বলেছে।
তিনি বলেন, ঢাকায় এসেই তারা বলছেন ঢাকায় তারা বিশাল সমাবেশ করবেন। নানাভাবে খবর আসছিল ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ করবেন। তারা প্রথমে চেয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অফিসের সামনে ও সংসদ ভবনের সামনে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না ছাত্রলীগের সমাবেশের কারণে। সংসদ ভবনের সামনে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ছাত্রলীগের সমাবেশ ৮ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর আনা হয়। ডিএমপি কমিশনার অনুমতি দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু তারা পল্টনেই করবেন। আমরা বিকল্প স্থানের কথা বললাম। কালশী, পূর্বাচলে। কিন্তু তারা পল্টনেই করবেন।
মন্ত্রী বলেন, হঠাৎ গতকাল শুনলাম পুলিশের ওপরে ঢিল, ইট-পাটকেল, ককটেল বিস্ফোরণ, আক্রমণ করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪৯ জন আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সিরিয়াস কয়েকজন ঢামেক হাসপাতালে আছেন। এখানে (রাজারবাগ হাসপাতালে) একজনের ৪২টা সেলাই দিতে হয়েছে। অনেকের শরীরে মারধর, আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, বেশির ভাগই হাত বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয়েছেন। এভাবেই তারা পুলিশ বাহিনীকে আহত করেছে। পুলিশ বাহিনী থেমে যায়নি। টিয়ারশেল, রাবার বুলেট মেরেছে।
বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুত, পানির মজুত ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাত বোমা ছিল। ছুরি-কাচি ছিল। ডেকে ডেকে খিচুড়ি ছিল। এগুলো আনার পেছনে আনার কারণ কি— জবাবে তিনি বলেন, তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এসব রসদ এনেছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়ির বহর। একই সময়ে উপস্থিত হন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Discussion about this post