শহিদুল ইসলাম হৃদয়, রাঙামাটি-
ভারতের মিজোরাম থেকে অবৈধ অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সশস্ত্র তৎপরতায়লিপ্ত উপজাতীয় আঞ্চলিকদলগুলো। এখানকার যৌথবাহিনীর নানামুখী তৎপরতায় এবার নতুন ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে পাহাড়ে প্রবেশ করছে অত্যাধুনিক মরনাস্ত্র ও বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের তাজা গুলি। ভারত থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ পার্বত্যাঞ্চলে আনতে বান্দরবানের রোয়াংছড়িকে বেছে নিয়েছে সশস্ত্র আঞ্চলিকদলগুলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে একটি চালান ইতিমধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপদে নিয়ে আসতে সক্ষমও হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বিরোধী উপজাতীয়দের একটি আঞ্চলিকদল এর নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রথম চালানটি নিয়ে আসলেও দ্বিতীয় চালানটি ক্রয়কৃত মূল মালিকপক্ষের হাতে পৌঁছানোর আগেই আটক করতে সক্ষম হয়েছে যৌথবাহিনী।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৭ টার দিকে রাজস্থলী উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বাঙ্গালহালিয়া বাজার থেকে সাবেক জনপ্রতিনিধি সুইচাচিং মারমা (৫৩) কে শর্টগানের তিনশত পিচ তাজাগুলিসহ হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত সন্ত্রাসী গাইন্দা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার বলে জানাগেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. ছুফি উল্লাহ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী শনিবার রাতে জানিয়েছেন, আমরা আটককৃত ব্যক্তির মরিচের বস্তার ভেতর থেকে ৩০টি তাজাগুলির প্যাকেট উদ্ধার করি।
পরবর্তীতে দেখাগেলো যার প্রতিটিতে বিশেষভাবে প্যাকেটিং করা ১০টি করে শর্টগানের তাজা গুলি রয়েছে। এসব গুলির গায়ে মেড ইন ইন্ডিয়া লিখা রয়েছে বলে থানা সূত্র জানিয়েছে। এই ঘটনায় চন্দ্রঘোনা থানায় অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নাম্বার-০৫, তারিখ:১৯/০২/২০২১ইং।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত নিয়ে আসা ব্যক্তিকে আমরা শনাক্ত করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছি। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
এছাড়া আটককৃত ব্যক্তিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাগেছে, ৩শত পিচ শর্টগানের গুলি পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর জন্য ভারতের মিজোরাম থেকে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি দিয়ে আনা হয়েছিলো।
সেগুলো মরিচের বস্তায় বরে বিশেষ কায়দায় সন্ত্রাসী সংগঠনটির নিকট হস্তান্তর করতে গেলে গোয়েন্দা নজরদারিতে ধরা পড়ে সুইচাচিং মারমা।
আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলগুলো এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরাম হতে রোয়াংছড়ি হয়ে বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় অস্ত্র ও গুলাবারুদ আনা হয়েছে। সে জানায়, মূলত: আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের মিশনের অংশ হিসেবেই এগুলো আনা হচ্ছিলো।
জানাগেছে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আধিপত্যের লড়াইয়ে লিপ্ত থাকা আঞ্চলিকদলগুলো।
স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আঞ্চলিকদলগুলো তাদের সশস্ত্র শাখার নেতাদের স্থানীয় তৃণমুল পর্যায়ে ইউপি নির্বাচনে নিজেদের লোকদের চেয়ারম্যান-মেম্বারের চেয়ারে বসাতে এখন থেকেই নিদৃষ্ট ছক আকঁতে শুরু করেছে পাহাড়ি অঞ্চলের কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের খোলসে আঞ্চলিকদলগুলোর সশস্ত্রকর্মীরা প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের অভিযানে নেমেছে বলে জানতে পেরেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসন যন্ত্র। যার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরধারি।
Discussion about this post