কক্সবাজার প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ২৫ দিন মর্গে পড়ে থাকা আলোচিত উপজাতি তরুণী লাকিংমে চাকমার লাশ অবশেষে তার পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আজ সোমবার বেলা ৩টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশটি হস্তান্তর করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
লাশ হস্তান্তরকালে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয় নিহত লাকিংমে চাকমার বয়স ১৬ বছর।
লাকিংমে চাকমার বয়স প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আইন মতে আদালত তার লাশটি পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক লাশটি হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এদিকে আদালতের নির্দেশে সোমবার মৃতদেহ নিতে হাসপাতালে আসেন লাকিংমের বাবা লালা অং চাকমা। কিন্তু হাসপাতাল মর্গ থেকে মরদেহ নিতে বাবাকে দিতে হবে ২৪ হাজার টাকা বিল। এত টাকা দেওয়াও তার পক্ষে সম্ভবন নয়। ফলে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পরও মেয়ের লাশ পাননি তিনি। দুপুরে মর্গের বিল দিতে সম্মত হয় এই ঘটনার তদন্ত সংস্থা র্যাব-১৫। এর ফলে মেয়ের মরদেহ নিতে আর বাধা নেই লালা অং চাকমার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে কিশোরী লাকিংমে চাকমার মরদেহ।
লাকিংমের বাবা লালা অং চাকমা বলেন, ‘অভাবের সংসার, এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই মেয়ের লাশ নিতে পারছিলাম না। অবশেষে র্যাব এই টাকা দিতে রাজি হয়েছে। এখন লাশ গ্রহণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি।’
লালা অং চাকমা বলেন, তাদের মেয়ে লাকিংমেকে অপহরণের পর জোর করে বিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা প্রিয় সন্তানের (লাকিংমে) মরদেহ গ্রামে নিয়ে শেষকৃত্য করতে চান।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহম্মেদ সমকালকে বলেন, নিহত লাকিংমের বাবা খুবই দরিদ্র। মর্গের বিল ২৫ হাজার টাকার জন্য মেয়ের লাশ নিতে পারছিলেন না লালা অং চাকমা। খবর পেয়ে আমরা মর্গের বিল পরিশোধ করেছি। লাকিংমে চাকমার লাশ নিতে আর কোনো বাধা রইলো না।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার দক্ষিণ শিলখালী এলাকার চাকমা পল্লিতে বসতি লালা অং চাকমার। জীবিকা নির্বাহ করেন সমুদ্রে মাছ ধরে ও পাহাড়ে জুম চাষ করে। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মেয়ে লাকিংমে চাকমা।
বাবা লালা অং চাকমার দাবি, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি তার মেয়ে লাকিংমেকে স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে। এরপর জোর করে বিয়ে করে হত্যা করা হয়। এখন মেয়ে হত্যার বিচার চান তিনি।
অন্যদিকে স্বামী দাবিদার আতাউল্লাহর দাবি, অপহরণ নয়, স্বেচ্ছায় তারা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে লাকিংমে ধর্মান্তরিত হন। তার (লাকিংমের) বর্তমান নাম হালিমাতুল সাদিয়া।
আতাউল্লাহ বলেন, এত দিন তারা কুমিল্লায় ছিলেন। ছয় মাস আগে স্ত্রীসহ টেকনাফে আসেন। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিউটি পার্লারে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রুমে গিয়ে সাদিয়া বিষ পান করে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে সাদিয়া একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
কক্সবাজারের একটি আদালত নিহত কিশোরীর ধর্মান্তরকরণ এবং অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে দায়িত্ব দেন র্যাবকে। আদালতের নির্দেশে র্যাব-১৫ রোববার আদালতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। র্যাবের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত রোববার লাকিংমের মরদেহ শেষ পর্যন্ত বাবার জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দেন।
Discussion about this post