বিশেষ প্রতিবেদক:
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী সংগঠন আরকান আর্মি ও সেদেশের সেনাবাহিনীর সাথে সহিংসতা এবং সংঘাত চলমান রয়েছে। সেনাবাহিনীর ছুড়া মর্টারশেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে বান্দরবান সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাঁইশপাড়ি এবং উখিয়া সীমান্তের পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া, ধামনখালী, রহমতের বিল ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং উলুবনিয়া। এখনো স্বাভাবিক হয়নি সীমান্তের বসবাসরত মানুষের দৈনন্দিন কাজ। স্কুল মাদ্রাসায় ক্লাস হয়েছে স্বাভাবিক। তবে উপস্থিতর হার ছিল কম। এ রিপোর্ট লেখাকালিন সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলির শব্দ। কোথাও কোথাও ধোয়ারকুন্ডলীও দেখা যাচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহা মোজাহিদ উদ্দিন আজ বুধবার সকালে ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।
সরজমিন মঙ্গলবার বান্দরবানের ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, বেলা দেড়টায় ৩৪ নং পিলারের মিয়ানমারের সেনা ঘাঁটির দিকে মর্টারশেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে সীমান্ত জনপদ। একটা নয় পরপর ১১ টি বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু সীমান্ত। এই সময় ১০ থেকে ১৫ টি গুলির শব্দও ভেসে আসে বাংলাদেশের ভূখন্ডে। এককথায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন অস্থিরতায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সীমান্ত এলাকার মানুষ।
এদিন সকালের দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী আঞ্জুমান পাড়া ও টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের মানুষ ২০ থেকে ২৫ টি মর্টারশেলের বিকট শব্দ শুনতে পায়।
তাছাড়াও গেল ক’দিনের মতো মঙ্গলবারও মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠির পাল্টপাল্টি হামলার প্রভাব ছিল নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার সীমান্ত পাড়ের মানুষের মাঝে। স্থানীয়রা বলছেন বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে তারা ভয়ে আছেন। কাজ করতে যেতেও মন সাই দিচ্ছেনা তাদের। একধরনের ঘরবন্দী জীবন পার করতে হচ্ছে সীমান্ত ঘেসা মানুষের।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দে এপারের মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির কারণে মানুষ সীমান্তে যেতে পারছেনা। সীমান্তের সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসে। কিছুতেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে দেওয়া যাবেনা। সীমান্তে বসবাসকারী বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মিয়ানমারের কাছাকাছি হওয়ায় তার এলাকার মানুষের জীবন যাপনে আঘাত আসছে। সীমান্তের যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের নির্দেশনামোতাবেক কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ টেকাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবির সদস্যরা সতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, “মাঝখানে কিছুদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। কিন্তু শনিবার থেকে আবারও মিয়ানমারের ভেতরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কিত অবস্থায় দিন যাপন করছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের ছুড়া গুলি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে না আসলেও গত সোমবার গোলাগুলির আওয়াজের পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ নম্বর পিলার ও হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের কাছে এসে পড়ল ১৪টি গোলা, এসেছে অসংখ্য বুলেটও।
এদিকে গত সোমবার ঘুমধুম সীমান্তের আটটি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও মঙ্গলবার স্বভাবিক রাখা হয় স্কুলের কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেছে প্রতিদিনের মতো। উপস্থিতির হার ছিল কম।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনাক্রমে গত ২৯ জানুয়ারী সোমবার ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার যথারীতি শ্রেণী কার্যক্রম চালু রাখা হলেও অন্যান্যদিনের তুলনায় উপস্থিতি ছিল কম৷ পরবর্তীতে পরিস্থিতি উপর নির্ভর করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনামতে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Discussion about this post