আলমগীর মানিক, রাঙামাটি –
রাঙামাটির রাজস্থলীতে ৪০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে সড়ক সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে আঞ্চলিক দল জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা। রাজস্থলী উপজেলাধীন বাঙ্গালহালিয়া-লংগদু পাড়া-নাইকাছড়ি সড়কে রাতের আধারে সশস্ত্র অবস্থায় ঠিকাদারের অস্থায়ী ঘরে(সাইটে) হামলা করে শ্রমিকদের মারধর করে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট্য ঠিকাদারের প্রতিনিধি দাবি করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস মূল দলের অন্যতম শীর্ষ চাঁদাবাজ চা থোয়াই মারমার নেতৃত্বে শনিবার রাতে লংগদু পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা এই ব্যাপারে থানা পুলিশের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে বলে জানাগেছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বাঙ্গালহালিয়া থেকে লংগদু পাড়া হয়ে নাইকাছড়িস্থ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক পর্যন্ত সড়ক সংস্কারে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে টেন্ডার আহবান করলে এস অনন্ত ত্রিপুরা’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।
সংশ্লিষ্ট্য ঠিদাকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এই কাজটি শুরু করার সময় জেএসএস নেতা চাথোয়াই ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরবর্তীতে তাকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এরই মধ্যে আরো চাঁদার দাবিতে দুই দুই বার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
সম্প্রতি কাজটি আবারো শুরু করলে শনিবার সন্ধ্যারাতে শ্রমিকদের থাকার অস্থায়ী ঘরে হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর করে চলে যেতে বলে জেএসএস নেতা চাথোয়াই। পরবতী প্রাণভয়ে সকল শ্রমিক পালিয়ে চলে যায়।
সংশ্লিষ্ট্য সূত্র জানিয়েছে, আবারো নতুন করে ২৫লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে চাথোয়াই। সেগুলো নাদিলে উক্ত রাস্তা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে নাবলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কাজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের
প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অনেক দেন দরবার করে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আবারো পুরনো কায়দায় আবারো বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষ ও থানাপুলিশকে বিয়ষটি অবহিত করেছি।
এদিকে উক্ত কাজের তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা কাপ্তাই উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়, সেই বিষয়ে উদ্বর্তন মহলের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।
এদিকে রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ মফজল আহমদ খান জানিয়েছেন, আমাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেছেন একজন। ঘটনাটি শুনার পরপরই এই ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা চা থোয়াই মারমা বিগত এক দশক ধরে রাজস্থলী এলাকার গহীন অরন্যে ছদ্মবেশে বাস করছে। কাপ্তাই উপজেলাধীন চিৎমরম থেকে শুরু করে বড়ইছড়ি-চন্দ্রঘোনা-রাজস্থলী হয়ে বান্দরবানের রাজভিলা এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে জেএসএস এর নামে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাঙামাটিতে সর্বোচ্চ চাঁদা আদায়কারী হিসেবে পরিচিত। রাঙামাটির বেশ কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, রাজস্থলীতে কাজ করতে গেলে বর্তমান সময়ে তিনটি আঞ্চলিক সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয়। তারমধ্যে জেএসএস এরনামে চাথোয়াই মারমা ৮% চাঁদা দাবি করে। তার দাবিকৃত চাঁদা দিতে গড়িমসি করলেই চাঁদার হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটিতে জেএসএস এর নামে সর্বোচ্চ চাঁদা আদায়কারি হিসেবে দুইজনের নাম সর্বমহলে পরিচিত ছিলো। তারমধ্যে বিগত বছরে অন্যতম শীর্ষ চাঁদাবাজ জ্ঞানশংকর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে প্রধান চাঁদাবাজ হিসেবে চাথোয়াই আর্বিভূত হয়।
গত বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে চাথোয়াই ভালূকিয়া এলাকার গভীরঅরন্যে আত্মগোপন করে ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি আবারো সে তার সংগঠনের তহবিল কালেকশনে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
Discussion about this post