ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ‘ছিলেন’ না। ২০০৮ সালের পর প্রথমবারের মতো তাকে বেঞ্চে রেখে কোনো মেজর টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছিল পর্তুগাল। তবে গনসালো রামোস তার অভাবটা বুঝতেই দেননি। করে বসেছেন হ্যাটট্রিক।
রোনালদো শেষে নেমেছেন মাঠে, তবে গোল পাননি। তবে এর আগেই রামোস যা করেছেন, তাতে ভর করেই গেল ইউরোর ‘জায়ান্ট কিলার’ সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে পর্তুগাল। চলে গেছে বিশ্বকাপের শেষ আটে।
চলতি বছর দুই দলের তৃতীয় সাক্ষাৎ ছিল এটি। আগের দুই ম্যাচই ছিল উয়েফা নেশন্স লিগের, প্রথমটায় শেষ হাসি হেসেছিল সুইসরা। সবশেষ ম্যাচে পর্তুগাল জিতেছিল ৪-০ গোলে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লিসবনের সেই ম্যাচে করেছিলেন জোড়া গোল। সেই রোনালদোকেই আজ দলে রাখেননি কোচ ফার্নান্দো সান্তোস।
তার বদলে যাকে আনা হলো দলে সেই গনসালো রামোসই গড়ে বসলেন ইতিহাস। প্রথমার্ধে জাও ফেলিক্সের বাড়ানো বলে করলেন দারুণ এক গোল, তাতেই পেছনে ফেলে দেন রোনালদোকে। বিশ্বকাপের নকআউটে ৫১৪ মিনিট খেলে রোনালদো যে গোলটা পাননি, ১৭ মিনিটেই তা আদায় করে নেন রামোস।
এরপর পালা আসে পেপের। ৩৩ মিনিটে ব্রুনো ফের্নান্দেজের কর্নার থেকে দারুণ এক হেডারে করে বসেন গোল। ৩৯ বছর ৯ মাস বয়সে গোলটা করে বনে যান বিশ্বকাপের নকআউটের সবচেয়ে ‘বুড়ো’ গোলদাতা।
বিরতির পর পর্তুগাল যেন আরও খুনে হয়ে উঠল। ৫১ মিনিটে ডিয়োগো ডালোর নিচু ক্রসে কাছের পোস্টে থাকা রামোস করেন গোল। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো একাদশে এসেই জোড়া গোল, পর্তুগালের ইতিহাস এমন কিছু দেখেছিল ১৯৬৬ সালে। সেবার হাঙ্গেরির বিপক্ষে জোসে আগুস্তো নিজের প্রথম ম্যাচে করেছিলেন জোড়া গোল, এর ৫৬ বছর পর এবার সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটান রামোস। তার ক্ষুধাটা সেখানেই শেষ হয়নি। এরপর ৬৭ মিনিটে দারুণ এক চিপে করেছেন আরও এক গোল, বনে গেছেন চলতি বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিককারীও।
সঙ্গে ২০ বছরের পুরোনো এক বিশ্বকাপ স্মৃতিও মনে করিয়ে দিলেন রামোস। ২০০২ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শুরুর একাদশে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। এর ৪ বিশ্বকাপ পর এসে সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটান তিনি। এই গোলে পেলের পাশেও এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ব্রাজিল কিংবদন্তির পর বিশ্বকাপ নকআউটে তার চেয়ে কম বয়সে যে কেউ আর হ্যাটট্রিক করতে পারেননি!
তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলের মাঝে অবশ্য রাফায়েল গেরেরোও গোল পেয়েছেন। সুইজারল্যান্ডও ম্যানুয়েল আকাঞ্জির কল্যাণে একটা গোল শোধ করেছিল। তবে হ্যাটট্রিকটা সেরে সুইসদের ম্যাচে ফেরার আশা শেষ করে দেন রামোস।
রোনালদোকে এরপর মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ সান্তোস। একবার সুইসদের জালে বলও জড়িয়েছিলেন, কিন্তু বেরসিক লাইন্সম্যানের পতাকা এই গোল উৎসবের দিনেও গোল পেতে দেয়নি পর্তুগিজ এই মহাতারকাকে।
খেলার শেষ দিকে চমৎকার এক গোল করেছেন রাফায়েল লিয়াও। তাতে ৬-১ গোলের বিশাল এক জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে পর্তুগিজরা। উঠে যায় প্রতিযোগিতার শেষ আটে। সেখানে দলটির জন্য অপেক্ষা করছে মরক্কো, যারা দিনের শুরুর ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে উঠে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
Discussion about this post