বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাষ্টার মুহিব্বুল্লাহ নিহত হওয়ার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ক্যাম্প জুড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তশেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকারীর পরিচয় জানিয়েছে তার ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থানকালে একটি বন্দুকধারী দল আমার ভাইয়ের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।
ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় মাস্টার আবদুর রহিম নামে এক সন্ত্রাসী। বন্দুকধারীদের এ দলে মুর্শিদ, লালুসহ ২০ থেকে ২৫ জন অংশ নেয়। তাদের অনেকে মুখোশ পরিহিত ছিল।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমার ভাই এগিয়ে আসতেন। তাদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন। শুধু এখানে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আমার ভাইয়ের পরিচিতি ছিলও।
হয়তো সেই যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে এ হামলা এবং তাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘাতকদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এর আগে, বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮ টার দিকে কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গাদের এই আলোচিত শীর্ষ নেতাকে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮ এপিবিএন) পুলিশ সুপার (এসপি) শিহাব কায়সার খান প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুহিবুল্লাহর লাশ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়ার পর ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়। লাশের সাথে ছিলেন, নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহ, চাচাত ভাই নুরুল আমিনসহ স্বজনরা।
মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবিরে মহাসমাবেশ করে আলোচনায় আসেন মাষ্টার মুহিবুল্লাহ।
একই বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৭ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ২৭ জন প্রতিনিধি অভিযোগ দেন মুহিবুল্লাহ ছিলেন তাদের একজন।
মুহ্বিুল্লাহ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনসিপের সিকদার পাড়া প্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।
আশ্রয় নেন কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে। তার বাবার নাম মৌলভী সিরাজ। ব্যক্তিজীবনে মুহিব্বুল্লাহ ছিলেন ৯ সন্তানের জনক। মিয়ানমারে থাকতে তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন বলে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কাছে তিনি ‘মাষ্টার মুহিব্বুল্লাহ’ নামে পরিচিত ছিলেন।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসাকে দায়ী করেছে স্বজনরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতোপূর্বে মুহিবুল্লাহ নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
তাছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে বাংলাদেশ সরকারসহ এনজিও, আইএনজিও এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে আসছিলেন এই নেতা।
তার এই ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় রোহিঙ্গা ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আরসাসহ অন্যান্য গ্রুপগুলো। এর ধারাবাহিকতায় তাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি স্বজনদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
Discussion about this post