পলাশ বড়ুয়া:
চরম দুশ্চিন্তায় কাটছে জীবন। খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছে স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবা। ছোট ছোট স্বন্তান দুটো কাছে ভিড়তেও সাহস পাচ্ছে না। ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ পেতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নি:স্ব নুরুল হক।
তার মতে, সহায় সম্বল যা ছিল বিনিয়োগ করেছেন উখিয়া উপজেলার কুতুপালংস্থ ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গেইট সংলগ্ন এলাকায় ফারজানা মেডিকোতে। বৈধ ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্স, পল্লী চিকিৎসকের সার্টিফিকেটও ছিল তার। তবুও রক্ষা করতে পারেনি জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ফার্মেসীটি। অপরাধ তেমন কিছু নয়, সিআইসি অফিসের কর্মচারিদের দাবীকৃত মাসোহারা দেয়নি বলে তার অনুপস্থিতিতে পুড়িয়ে দিয়েছে ফার্মেসীতে থাকা ৭ লক্ষাধিক টাকার জীবন রক্ষাকারী ঔষধ।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমখাঁপালং ইউনিয়নের রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল হক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, সিআইসি স্যার যখন আমার অনুপস্থিতিতে ফার্মেসীতে যান তখন আমি স্যারকে বলেছিলাম আমি আসতেছি স্যার। তখন উত্তরে আমাকে অফিসে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। উনার কথা মতো অফিসে যাওয়ার পূর্বে সহযোগীদের নিয়ে ঔষুধ গুলো পুড়িয়ে ফেললো। এতে আমার বিনিয়োগকৃত ব্যক্তিগত পুঁজি ছাড়াও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর বকেয়া ৩ লক্ষ টাকার অধিক এবং ধার-কর্জসহ ৭ লক্ষাধিক টাকার দায়ভার মাথার উপর। যা আমার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। ন্যায় বিচারের আশায় আরআরআরসি কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি। ঘটনার ৮ দিন গত হলেও মিলছে না কোন সমাধান।
প্রত্যক্ষদর্শী রফিকের মতে ২৫ জানুয়ারি ঘৃণ্য এই কাজটির নেতৃত্ব দেন কুতুপালং ৭নং ক্যাম্পের ইনচার্জ ও সিনিয়র সহকারি সচিব জেপি দেওয়ান। তাঁর সহযোগিতায় ছিলেন, কমিউনিটি মোবিলাইজার মো: আজিজ, সিপিপি সদস্য মো: জসিম, রবু বড়ুয়া, ওয়াহিদুল ইসলাম।
ঔষধ পুড়িয়ে ফেলার সংবাদটি দিন প্রিন্ট, ইলেকট্রিক সংবাদ মাধ্যম গুলো পরিবেশন করলেও পরের দিন থেকে হারিয়ে গেছে নুরুল হক ও তার কষ্টের কথা।
বহাল তবিয়তে থাকা ক্যাম্প ইনচার্জ জেপি দেওয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কমিউনিটি মোবিলাইজার মো: আজিজের সাথে কথা বলতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ওই দিন সিআইসি জেপি দেওয়ানের বিরুদ্ধে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, উখিয়ার ব্যানারে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সর্বস্তরের মানুষ। পরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের কারণে প্রশাসনের অনুরোধে তা স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন ওই সংগঠনের সভাপতি শরীফ আজাদ।
তিনি এও বলেন, বিষয়টি আগামী এক সপ্তাহ’র মধ্যে সমাধান করা হলে পুনরায় আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
নবী হোসাইন নবীন নামে একজন বলেছেন, জেপি দেওয়ান নামে একজন ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ব্যক্তি স্থানীয় নূরুল হকের দোকান সব ঔষুধ অন্যায় ভাবে পুড়িয়ে দিল, এখন তিনি সর্বহারা !
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা। ক্যাম্পের কাটাতার সংলগ্ন স্থানীয় যুবকের একটি ফার্মেসীতে অভিযানের নামে সিআইসি কর্তৃক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি অমানবিক এবং অন্যায় হয়েছে। অথচ ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অসংখ্য রোহিঙ্গা দেদারছে ফার্মেসী, জুয়েলারি শপসহ নানা ব্যবসা করছে।
অপরদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, একজন নিরীহ ক্ষুদ্র জীবিকা সন্ধানী সর্বস্ব আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া কর্মকর্তার যথাযথ বিচার ও ক্ষতিপূরণ করা হচ্ছে কিনা পুরো জেলাবাসী সেদিকে থাকিয়ে আছে। কারণ এ নির্মম ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামশু-দ্দৌজা বলেন, হয়ত: ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ফার্মেসী, জুয়েলারী শপ ও ইলেকট্রনিক্স শো-রুম উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে হয়ত: এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবুও ঔষধ পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ এখনো পায়নি। অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক বিষয় গুলো সংশ্লিষ্ট আরআরআরসি দেখভাল করেন।
Discussion about this post