বিডি দর্পণ ডেস্ক:
২০১৭ সালে আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার সেনাবাহিনীর কর্তৃক নানাবিধ অত্যাচার, নির্যাতনে শিকার হয়ে দিনের পর দিন সে দেশ থেকে বিতাড়িত হতে থাকে রোহিঙ্গারা। দেশের সমুদ্র জনপথ বেয়ে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে ঢোকার চেষ্টা করলে বিভিন্ন দেশ তাদের ঢুকতে দেয়নি।শেষমেশ জাতিসংঘের অনুরোধ ও মানবিকতার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে আশ্রয়ের সুযোগ পায় লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গারা।
ছোট ও গরীব এই দেশে তাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের মানবিকতার তুমুল শীর্ষে যেন জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এটি একটি মহৎকর্ম। তারপর থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশি বিদেশী এনজিও ও সরকারের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে সরকার, এমনকি দেশের মানুষও সে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেদিনের অসহায় রোহিঙ্গা, আজ কতটা বেপরোয়া, হিংস্র! সেটাই ভাবছে স্থানীয়রা।
কালক্রমে দিনের পর মাস, মাসের পর বছরের গন্ডি পেরিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ৩ বছর পার হয়ে গেল। তবে পাল্টে গেছে অনেক হিসাব-নিকাশ,পাল্টে গেছে রোহিঙ্গাদের জীবনধারণ। ক্যাম্পের বেড়াবেস্টিত বাড়ি ডিঙ্গিয়ে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে ইটযুক্ত বাড়ি তৈরী করছে, জনপদে মিশে গেছে , কেউ কেউ বিভিন্ন সিএনজির মালিকও হয়েছেন,আবার কেউ রাজার মত রাজত্ব করছে।
সেদিনের অসহায় রোহিঙ্গারা যেন আজ দেশের বিত্তবান,প্রভাবশালী আর দেশের মানুষ হয়ে গেল নিরীহ!
যেখানে উখিয়া টেকনাফের সব মিলিয়ে স্থানীয় জনগণ ৫-৬ লক্ষ সেখানে রোহিঙ্গারা আনুৃমানিক হিসাবে ১২-১৪ লক্ষ। যেখানে বলা যেতে পারেই স্থানীয়রা যেন নিজেদের শরণার্থীর মত।
পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেয়া সরকারের পক্ষে তেমন সম্ভব নয়। তাই এই রোহিঙ্গাদের দমানো মুশকিল হয়ে পড়েছে ।
যারা ফলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাহায্যে রোহিঙ্গারা গড়ে তুলছে ইয়াবা, অস্ত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদককারবার। ক্যাম্পের ভিতর গড়ে তুলেছে অস্ত্রধারী বিভিন্ন বাহিনী। যার ফলে ক্যাম্পের সংঘর্ষ , হামলা , গোলাগুলি, খুন, গুম করে ফেলার কাহিনী নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ।
সে প্রভাব শুধু ক্যাম্পের ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকেনি স্থানীয়দেরও যেন তার প্রভাব সহ্য করতে হচ্ছে।
বালুখালী এলাকার যুবক মোঃ পারভেছ জানান, রোহিঙ্গারা না আসার আগে স্থানীয়রা খুব স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদে জীবনযাপন করে আসছিল, কিন্তু তারা আসার ফলে এলাকায় মাদককারবার, খুন, গুম বেড়ে গেছে, যে এলাকায় ৪০ বছরেরও কোনো ডাকাতি হয়নি সে জায়গায় প্রতিনিয়ত ডাকাতির শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয়দের। আরেক স্থানীয় যুবক আবুল কালাম জানান, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে আমরা প্রতিদিন শঙ্কায় দিন যাপন করছি।আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ক্যাম্পের বিভিন্ন অস্ত্রধারী বাহিনী এলাকায় এসে বিভিন্ন লুটপাট চালায় এবং মানুষ গুম করে নিয়ে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদা দাবি করে। দিতে না পারলে হত্যা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়।
আরেক স্থানীয় যুবক পারভেজ বলেন, রোহিঙ্গা আসার পর থেকে সাম্প্রদায়িক ইস্যু তুলে বিভিন্ন হামলার ভয়ে আমরা দিনরাত ভয়ে থাকি।এমনকি নিজেদের বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে জায়গাও ছেড়ে দিতে হয়েছে রোহিঙ্গাদের।
এই বিষয়ের পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এবং আমার এলাকা থেকে শুরু করে উখিয়া টেকনাফের কোনো জনগণ নিরাপদ নেই।সাম্প্রতিক কয়েকমাস আগে রোহিঙ্গা কর্তৃক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী আমি এবং আমার এলাকার মানুষদের হত্যা এবং গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। যার ফল নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে উখিয়া থানায় একটি জিডি করি।
তিনি আরো বলেন, এই রোহিঙ্গাদের দমানো খুব কঠিন।মায়ানমার সীমানা কাছের হওয়ায় তারা সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করার সুযোগ পায়। তিনি সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করে এই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনো ভাল পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
Discussion about this post