চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের রামু পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শেষ করতে পুরো দমে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে রেলমন্ত্রণালয়। কক্সবাজারের ঐতিহ্য শামুকের আদলে দৃষ্টি নন্দন আইকনিক ষ্টেশনসহ থাকবে ৯টি স্টেশন। এ্যানিমেশনের এই চিত্রে কক্সবাজারের রেললাইনের এমনই নান্দনিক পরিকল্পনায়ই ফুটে উঠেছে।
তবে সব ঠিক থাকলেও রামু পর্যন্ত এসে থেমে যাবে রেললাইনের কাজ। ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেল স¤প্রসারণর কাজ পরিকল্পনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। যদি রেল চলাচল শুরু হয়, তবে কক্সবাজারের পর্যটন, অর্থনৈতিতে আসতে যাচ্ছে বড় পরিবর্তন। ২৩ সালের মধ্যে রেল চলাচল করতে পারবে বলে আশা রেল মন্ত্রণালয়ের।
সংশ্লিষ্ট্যরা জানান, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার অংশের কাজ হচ্ছে না।
নতুন পরিকল্পনা মতে , এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭০ শতাংশ। এরই মধ্যে বসানো হয়েছে কক্সবাজার অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং, হাইওয়ে ক্রসিংয়ের নির্মাণ কাজ ৬০ শতাংশে এসে থেমেছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আবিদ আহসান সাগর জানান, রেললাইনের কাজ যদি সম্পন্ন হয়; তাহলে আমরা আন্তজার্তিকভাবে যোগাযোগ সুবিধা পাব। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এতে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।
দোহাজারি-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ফরহাদ হোসেন জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের টার্গেট আছে ১৮-১৯ ঘণ্টা কাজ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
স্থানীয়রা বলছেন, দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, পর্যটকদের যাতায়াত যেমন আরাম ও নিরাপদ করবে।একইভাবে কমাবে সময় এবং তৈরী হবে অর্থনৈতিক হাব।
শুভ্র সাদা বিশাল আকৃতির এক ঝিনুক। এর ভেতরে আসা যাওয়া করবে ট্রেন। এমন দৃশ্য বাস্তব হতে চলেছে সৈকত শহর কক্সবাজারে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের আওতায় চলছে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজ। যার ৬ তলা স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে।
স্টেশনটি হচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চাঁন্দেরপাড়া এলাকায়। নির্মাণাধীন স্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছয় তলা স্টেশন ভবনের মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। দিন-রাত কমবেশি ৫ শতাধিক প্রকৌশলী ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে স্টেশন ভবনটির নির্মাণকাজে। স্টেশন ভবন ছাড়াও আরও ১৭টি স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, যেগুলো ব্যবহার করা হবে রেলওয়ের পরিচালনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে।
শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করতেই ২১৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেশনটিতে যাত্রী প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন পথ। থাকছে গাড়ি পার্কিংয়ের বড় জায়গা। আইকনিক রেলস্টেশনটিতে থাকছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্ন কেন্দ্র। থাকছে লকার বা লাগেজ রাখার স্থান। রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজারে গিয়ে পর্যটকেরা লাগেজ, মালামাল স্টেশনে রাখতে পারবেন। আর সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রজেক্টের (আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং) কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার মো. আব্দুল জাবের মিলন বলেন, ছয় তলা আইকনিক স্টেশন ভবনের মূল কাঠামোর নির্মাণ কাজ। এর পাশাপাশি প্লাটফরম ও ফুটওভার ব্রিজের ৩০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। এখন বাকি আছে ফিনিশিং, ছাদের কাঠামো তৈরি ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। ছাদের কাঠামো তৈরির কাজটি এপ্রিল মাসে শুরু হবে।
আর ফিনিশিং এর মধ্যে সেন্ট্রাল এসি, ফায়ার ফাইটিং, বিএমএ সিস্টেম, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজ রয়েছে; যা বর্ষা মৌসুমেও কোনো ধরণের কাজে সমস্যা হবে না। কারণ ভবনের মূল কাঠামোর কাজ যেহেতু শেষ, ফলে এই কাজগুলো ভেতরে বসে করা যাবে। যার ফলে কাজগুলোও দ্রত গতিতে এগিয়ে যাবে। বলা যায়, প্রকল্প মেয়াদের দুই মাস আগে এই আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
Discussion about this post