bddarpan.com
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারাদেশ
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • কক্সবাজার
  • অর্থনীতি
  • সীমান্ত
  • সম্পাদকীয়
  • পর্যটন
  • খেলা
  • রোহিঙ্গা
  • আরো
    • শিল্প ও সাহিত্য
    • আইন ও আদালত
    • লাইফস্টাইল
    • চাকরি
    • শিক্ষা
    • স্বাস্থ্য
    • অপরাধ
    • বিনোদন
No Result
View All Result
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারাদেশ
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • কক্সবাজার
  • অর্থনীতি
  • সীমান্ত
  • সম্পাদকীয়
  • পর্যটন
  • খেলা
  • রোহিঙ্গা
  • আরো
    • শিল্প ও সাহিত্য
    • আইন ও আদালত
    • লাইফস্টাইল
    • চাকরি
    • শিক্ষা
    • স্বাস্থ্য
    • অপরাধ
    • বিনোদন
No Result
View All Result
bddarpan.com
বৃহস্পতিবার, ২৩শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
মূলপাতা শিল্প ও সাহিত্য

যে আশা অপূর্ণতায় শেষ

প্রকাশিত
ডিসেম্বর ২৪, ২০২০ ১১:৪৪ অপরাহ্ণ
মাসউদ শাফি

কালাম আজাদ:
মাসউদ শাফি, বাঙলা সাহিত্যে শূন্য দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি, রাজনৈতিক কর্মী। শূণ্য দশকের আরেক শক্তিমান রাকিুবল ইবনের মতো তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায়। ভোগেছেন লিভার জন্ডিস রোগে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন নিজের আরোগ্য লাভের জন্য কিন্তু নিষ্টুর দূরারোগ্য ব্যাধি লিভার জন্ডিস ও হ্যাপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাচানো সম্ভব হলো না।

শূণ্য দশকের শক্তিমান কবি মাসউদ শাফির পুরো নাম শফিউল আলম মাসউদ (ভোটার আইডি কার্ডে শফিউল আলম বলে উল্লেখ আছে)। জন্ম ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই (এসএসসি’র সনদ অনুযায়ী ১০ জুলাই ১৯৮৬)। উখিয়া উপজেলার রত্মাপালং ইউনিয়নের রুহল্লরডেবা গ্রামের বনেদী পরিবারের সন্তান মৃত এজাহার মিয়া ও মা ফিরোজা বেগমের শেষ সন্তান তিনি।

স্কুল জীবনের শুরু থেকেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত। স্কুলে ফাস্ট বয় হিসেবেও খ্যাত ছিলো। স্কুল জীবন পেরিয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজে অধ্যয়ন করেন। পাশ করেন এইচএসসি। পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জন্ম হওয়া বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীর সাথে পরিচিত হন।

শংকর বড়ুয়া রুমি (কক্সবাজার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কক্সবাজার জেলা সংসদের সাধারণ সভাপতি, সাংংবাদিক) এর হাত ধরে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

সহপাঠী-বন্ধু হাশেম কায়সার, চারুয়ার চাহেল, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী জসিম আজাদ, শরীফ আজাদ, সরওয়ার কামালসহ অন্যান্য বামপন্থী বন্ধুদের পরিচিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক পরিচয়।

১৯৯৯ সালে পালং উচ্চ বিদ্যালয় সংসদের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে যোগদান করে উখিয়া উপজেলা সংসদের সভাপতি, জেলা সংসদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনসহ আমৃত্যু জেলা সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এ দিকে কবি মাসউদ শাফির বৈমাত্রেয় ভ্রাতারা বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। বড় ভাই নুরুল আলম কন্ট্রাক্টর উপজেলা বিএনপি নেতা এবং সেজ ভাই ফরিদুল আলম (কোট বাজার স্টেশনের জমজম মার্কেটে যার একটি ফার্মেসি আছে সেখানে এলএমএফ ডাক্তার হিসেবে চিকিৎসা প্রদান করেন) উখিয়া উপজেলা জামায়াত নেতা হওয়ায় অসম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে পরিবারের প্রতিকুল অবস্থার শিকার তো হতে হবেনই।

ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে কয়েকবার ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। পারিবারিক আনুকূল্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৈশোর জীবনে জেটার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে লেখাপড়া করতেন। এসএসসি পাশের পর কক্সবাজার সরকারি কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নকালে বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদের প্রতিকূলতার শিকার হয়েছে। তাকে পারিবারিকভাবে এত নির্যাতন করা হতো যে পারিবারিক বিশাল সম্পত্তি থেকে বাদ দেয়া সম্ভব।

মা ও ভ্রাতাকে না খাইয়ে আলাদা করে ঘর তৈরী করে দিয়েছিলেন। সম্ভাব্য এবং বনেদী পরিবারের বউ হয়ে স্বামী মারা যাবার তাকে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঝিইয়ের কাজ করতে হয়েছে। মাসউদ শাফিকে অন্য বাড়ি গিয়ে পড়াতে হয়েছে।

তারপরেও শান্তি নেই। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও উখিয়া কোটবাজার থেকে কক্সবাজার কলেজে যাতায়াত করতেন। পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। এ সময় উখিয়া সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ (উসাস) নামে সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে, রাজনীতি এবং কবিতা বিষয়ক চিন্তা নিয়ে আলোচনা করতেন। পাশাপাশি ছাত্র ইউনিয়নের কাজও করতেন। এ মুহর্তে স্কুল জীবনের একটি স্মৃতি এবং মাসউদ ভাইয়ের সাথে পরিচয় পর্বের কথা মনে পড়ে যায়।

সময়টা ছিল ২০০১। ২০০১ সালের আগস্ট মাসের কোন একদিন (এ মূহূর্তে দিনটা মনে পড়ছে না) উসাস এর বুলেটিন নিয়ে হাজির হন মরিচ্যা পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। যেখানে আমি পড়তাম। একদিন ক্লাসে ঢুকার আগেই দেখতে পেলাম লম্বা এবং কালো এক সুদর্শন পুরুষ কবিতা, সাহিত্য এবং রাজনীতি সম্পর্কে আলোচনা করছেন। তার সাথে আমাদের আরেক বড় ভাই বাবুল মিয়া মাহমুদ।

তিনিও ছড়া কবিতা লিখতেন। এখনো লেখেন এবং সাংবাদিকতাও করেন। বাবুল মিয়া মাহমুদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করায় শফিউল আলম মাসউদ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে তার সাথে দেখা হলে বলতেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা রক্তপিপাসুদের খোঁজে বের করে তাদের সমূলে ধ্বংস করতে হবে।

এভাবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই একদিন কোন কাজে আমি গিয়েছিলাম কোটবাজার স্টেশনে। সেখানে দেখা হওয়া মাত্রই স্নেহের পরশ বুলিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে চা ও বিস্কুট খাওয়ালেন। পরিবারের সবার খবর নিলেন।

এক পর্যায়ে ছোটদের অর্থনীতি, ছোটদের রাজনীতি নামক দুইটি বই হাতে দিয়ে বললেন এগুলো নিয়ে যাও, পড় এবং পড়েই আমাকে হাজিরা দিতে হবে কিন্তু। ছোটদের রাজনীতি নামক বইটি পড়তে গিয়ে কিছু কিছু বুঝতে পারলেও কয়েকটি বিষয়ে না বুঝায় তার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করায় তিনি এমন বুঝিয়েছেন যে এখনো পর্যন্ত আমার মনে আছে।

এর পর থেকে “তানিয়া, কী করতে হবে কেন করতে হবে?, লেনিন, কার্ল মাক্রস, এঙ্গেলস, চালর্স ডারউইন, স্টিফেন হকিং, আবুল ফজল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মাদামকুরী, শেক্সপিয়র, লিও টলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, এন্থনিও গ্রামসীসহ একের পর এক বই পড়তে দিতেন এবং সব বই ফেরত নিয়ে নিতেন আবার।

এই বইগুলো পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মকান্ডের সাথে পরিচিত হয়ে পড়ি। যদিও ছাত্র ইউনিয়ন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তার একটি বড় ইতিহাস রয়েছে, তা পরে আরেকটি লেখায় লিখবো বলে এখানেই ইতি টানলাম।

মাসউদ শাফির সাহিত্যজীবনের শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। ১৯৯৯ সালের ৯ জুলাই উখিয়ায় লেখা ডায়েরিতে লেখেন, “কবিতা আমার জীবনের প্রথম প্রিয়া-আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম।

ছেলেবেলায় ইস্কুলে যেতে রাস্তা বড়ো নির্জন এবং দু’পাশে সারি সারি গাছে পূর্ণ থাকত। অনেকদিনই ঐ পথে একা ইস্কুলে গেছি এবং যেদিনই একা যেতাম জোরে জোরে আবৃত্তি করতাম। এখনো সে সব দু-একটি মনে আছে- ঐ কবিতা এখন পেলে হয়ত পড়তেই ইচ্ছে করবে না।

কিন্তু সে-দিন কী ভালোই যে লাগত। ক্লাসের নতুন বই কেনা হলে দেখা যেত, মাসখানেক না যেতেই বাংলা পাঠ্য বইয়ের সবক’টি কবিতা কণ্ঠস্থ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে করেছি তা নয়, ব্যাপারটা কেমন যেন আপনা থেকেই হয়ে যেত। কত চরণ তার মনের মধ্যে এখনো জ্বলজ্বল করছে।”

মাসউদ কলেজে পড়ার সময়ই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন। মুদ্রিত রচনার মধ্যে ‘কালো পর্দার রাজত্ব শিরোনামে ২০০০ সালে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় যে-কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটিই তাঁর প্রথম প্রকাশিত লেখা বলে ধরে নেওয়া যায়।

এরপর আসা যাক পারিবারিক আনুকূল্য ছেড়ে কেন কক্সবাজারে বসবাস করতেন সে সব কথায়, ২০০৩ সালে কোটবাজার স্টেশনে বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হিসেবে বক্তৃতা করার সুযোগ হয় তার। ওই অনুষ্ঠানে শফিউল আলম মাসউদ ওই সময়ে বিএনপি জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত কয়েকটি সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখার সময় বিপুল জনতা তাকে সাধুবাদ জানায়।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের নেতা ফরিদুল আলম ও বিএনপি নুরুল আলম কন্ট্রাক্টর (তার বৈমাত্রয় বড় ভাই ) তাকে ধরে কোটবাজার স্টেশনে ব্যাপক মারধর করে এবং মাথার চুল কেটে দিয়ে চারদিকে ঘুরায়।

মার খাওয়ার পর মায়ের কাছে গিয়ে সমাদর পাননি তিনি। কোত্থকে পাবে, বাবা এজাহার মিয়ার মারা যাবার পর মা ফিরোজা বেগমতো পালিত হতেন প্রথম পক্ষের সন্তানের হাতে। এমন অপমানের পর পারিবারিক আনুকূল্য ছেড়ে দিয়ে পর্যটন শহরে কক্সবাজারে শংকর বড়ুয়া রুমির কাছে চলে আসেন। ওই সময় থেকে সর্বশেষ বিষয়ভিক্তিক ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

জড়িয়ে পড়েন খেলাঘর, থিয়েটার ও পাবলিক পাবলিক কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চায় ও পরবর্তীতে বাঙলাদেশ লেখক শিবির আন্দোলনে। বলতে গেলে তিনি লেখক শিবিরের কক্সবাজারের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশ নিয়েছেন।

লিখতেন কবিতা, প্রবন্ধ, করতেন পুস্তকের আলোচনা। ওই সময় শখের বসে সাংবাদিকতাও করতেন তিনি। থাকতেন শংকর বড়ুয়া রুমি, নুপা আলম, রহমান মুফিজ, রিদুুয়ান এবং বৈরাম ইলিয়াসের ছত্রছায়ায়।

সৎ চরিত্র ও ব্যবহারে অমায়িক হওয়া অধিকারী হওয়ায় পছন্দ করতে প্রগতিশীল রাজনীতি পরিবারের সদস্যরা। শুধু তাই নয়, তাকে দেখতে পেতেন এমন লোক খুবই কম রয়েছে। তবে জামায়াতের লোক একদম দেখতে পেতেন না তিনি।

জামায়াত শিবির এবং বিএনপির রাজনীতির নামে মানুষ মারা রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকা ও যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিরোধিতা করে ঘর ছেড়েছেন এবং আমৃত্যু তিনি রাজপথে এবং শ্লোগানে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছেন এবং পাশাপাশি আমৃত্যু নিজের আদর্শকে জলাঞ্জলি দেননি।

তার সাথে দ্বিতীয়বার পরিচিত হয় যখন আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র (তখন তিনি পুরোদস্তে রাজনৈতিক কর্মীর পাশাপাশি সংস্কৃতি ও কবিতাকর্মী হিসেবে কক্সবাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।) ওই সময় বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতাম।

একদিন কি কারণে বাড়িতে যেতে না পারায় আমাকে তার মোহাজের পাড়াস্থ বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো। ওইখানেই আবিষ্কার করলাম শূন্য দশকের এক আপাদমস্তক কবিকে। মফস্বলবাসী কবি হিসেবে জাতীয় পত্রিকা ও সাময়িকীতে সমান ভাবে লিখেছেন তিনি। আমৃত্যু কবিতা চর্চা করলেও বের হয়নি কোন প্রকাশনা। তবে দাহকাল ও রক্তবাক নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ওই কাগজে দেশের অনেক গুনী লেখকের সমাবেশ ঘটিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দৈনিক কক্সবাজার বাণী নামে পত্রিকার সাহিত্য পাতা দেখতেন তিনি। আমৃত্যু এ পাতা দেখেছেন।

সেই ২০০৭ থেকে তিনি কোন সমস্যায় পড়ে বাসা ছেড়ে দেয়ায় প্রায় সময় আমার বাসায় থাকতেন। এমনকি চুল রাখায় তার জন্য আমার একটি ভাড়া বাসাও ছাড়তে হয়েছিলো। তারপরও আমার সাথে ছিলেন সব সময়। ওই সময় আমি যুব ইউনিয়নের সাথে জড়িত হয়ে পড়ি। যার ফলে তার সাথে ওঠাবসা আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায়। গত প্রায় ৬ বছর যাবৎ তিনি আমার সাথে থাকতেন। মাঝে মধ্যে অমিত চৌধুরীর বাসায়ও থাকতেন। মাঝে মধ্যে কোথাও উধাও হয়ে যেতেন।

বেশ কয়েকদিন পরেই আবার রাত একটা কিংবা তিনটায় এসে বাসার দরজায় কড়া নাড়তেন। এ নিয়ে ওনার সাথে কয়েকবার কথাকাটাকাটিও হয়েছিলো। রাগ করে চলে যাবার জন্য উদ্যত হইলে মাফ চেয়ে নিয়ে নিতাম। সে সময় বলতো কালাম সবাই না বুঝলে তুমি তো বুঝ, আমাকে। মাঝে মাঝে এতই আবেগপ্রবণ হয়ে যেত তাকে সামলানো যেত না, ওই সময় শুধু কান্না করে করেই পরিবারের কথা বলতেন, কিন্তু একদিনও তার মায়ের কথা বলিনি।কেন বলিনি। তা কেউ জানে না একমাত্র তিনি ছাড়া।

জামায়াত নেতা ফরিদুল আলমকে তার এ অবস্থার জন্য দায়ী করতেন তিনি। ওই সময় মাঝে মধ্যে আগুন আগুন বলে বলে চিৎকার করে একটি কবিতা সব সময় মুখে আওড়াতেন।

আমি এই কবিতাটির ভগ্নাংশ তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারলামনা
আগুন
আগুন আগুন…
বুকে আগুন
চোখে আগুন
মুখে আগুন
সিগারেটের মতোন পুড়ে পুড়ে
দগ্ধ হতে হতে
ছাই হচ্ছি বারংবার এভাবে
।

এ কবিতা আওড়াতেন আর কান্না করতেন। সাত বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে যে এতিম হয়েছিলেন মরা অবস্থায়ও তা ছিলেন, কিন্তু কখনো কারো কাছে মাথা নত করতে দেখেনি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু চাইতেন না, যেটা তার দ্বারা সম্ভব হবেনা, তাই নিয়ে তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না তিনি। কিন্তু মেহনতি মানুষের যেখানে কষ্ট পেতে দেখেছেন সেখানেই স্বোচ্ছার হয়েছেন।

তিনি রাত করে যে বাসায় যেতেন আর মাঝে মধ্যে দুস্তামি করতেন তা নিয়ে অনেক সময় ঝগড়া হতো। আমি বাসায় না গেলেও আন্টিকে ডেকে বাসায় ঢুকে ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি। কয়েকদিন কথা বলাবলি বন্ধ থাকার পর হঠাৎ আমাকে খুঁজে বাসায় ফিরতেন। মাঝে মধ্যে ফোন করে জেনে নিতেন পত্রিকার কাজ শেষ হয়েগেছে কিনা।

কাজ শেষ হয়েছে আপনি বাসায় চলে যান আমি আসতেছি, কিন্তু পরক্ষণে দেখা যায় আমি কোন একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তিনি শীতের সময় শীত এবং গরমের সময় গরমকে উপেক্ষা করে বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। কিন্তু এক্টু বিরক্ত হননি। তবে মাঝে মধ্যে আমিও রেগে যেতাম, এটা করলে কেন আসেন, আসিয়েন না, কোন কিছু খেয়ে আসলে মানুষেরা বলবে, আমাকে আবার…. এমন একদিন সারারাত খেয়ে সকালে বাসায় পড়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক বল ভেঙে ফেলায় তার সাথে ঝগড়া করি ; তাকে কটুক্তিও করে ছিলাম এরপর ৬/৭ দিন তিনি আর আসেননি।

শুনেছি সে সময় তিনি আমার জন্মস্থান হলদিয়া পাতাবাড়ির তার এক বন্ধু কাসেম, আমার মায়ের বাসায় গিয়ে থেকেও এসেছে। এখান থেকে এসে একদিন শীতের রাতে আমার বাসায় আছে, ওই দিন ঘুমে থাকায় আমাকে না পেয়ে ছেনু আন্টিকে ডাক দিলে তিনি দরজা খুলে দিলে ঘুমিয়ে পড়েন। খুব সকালে চলে যায় এক রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে। এই দিন আমি দেখিনি তারে। দেখেছি হাসপাতালে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পেয়ে রাত ১২টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা করি আসি। পরক্ষণে আমি চলে আসি। তারপরদিন যাই। ওই দিন আমাকে দেখে কালাম আমাকে ফেলে চলে যাইয়ো না। রিদুয়ান, মানিক ভাই, শহীদ ভাইসহ অনেকের কাছে অনুরোধ করেছিলো তার সাথে একজন রাখার, কিন্তু থাকার বেলায় কেউ থাকেনি।

অবশেষে পত্রিকার কাজ ছেড়ে প্রেস ক্লাবের ইসহাক ভাইকে নিয়ে আমি হাসপাতালে গেলে দেখি তিনি বিছানাতেই মলত্যাগ করেছেন। অনেক কষ্ট করে সেগুলো পরিষ্কার করি। সে সময় দুজনকে মানুষকেও দেখি। পরে জানতে পারি তারা দুজনই মাসউদ শাফির আত্মীয় স্বজন। একজন নিজের ভাই, অন্যজন দুলাভাই। এর এক ঘন্টা কি পৌণে এক ঘন্টার মধ্যে মাসউদ শাফিকে ফেলে তারা উখিয়ায় চলে যায়।

আমার পরীক্ষা আসে বলে মিথ্যার অজুহাত দিয়ে ভাইদের রাখতে চাইলেও এত জোরাজুরির পরও তারা থাকেনি। এমনকি মাসউদ শাফি তাদের ভাই সেটা পর্যন্ত ডাক্তারদেরকে পরিচয় দেয়নি। তারা চলে যাবার পর মাসউদ শাফি আমাকে দেখে বললো কালাম তুই আমাকে ফেলে যাবিনা (অথচ কোন দিন আমাকে তিনি তুই বলে ডাকেনি) শপথ কর। আমি বললাম, না যাবো না।’

মারা যাবার দেড় ঘণ্টা আগে এর একদিন আগে লিখিত সুন্দর কবিতাটি পড়ে শুনতে চাইছিল। পরে শুনাবো বলায় আমাকে থাপ্পড়ও মেরে ছিল। তারপর তার কবিতাটি পড়ে শোনালাম। শুনেই বলল, শান্তি পেলাম, মানিক ও সিরাজ স্যারকে ডাক, ওরা কি জানে আমার অবস্থা এ রকম হচ্ছে।

তুই আমার সামনে ফোন দে, আমার রাজনীতির গুরু শংকর দা ও নুপা কেন আসছে না, সাহেল এর নাম্বার আছে তারে ফোন দে। এর দুই মিনিট পরই চিল্লা চিল্লি শুরু হইল। থামাতে পারলাম না, থামাতে গিয়ে সেলাইনের শিষ বের হয়ে প্রচুর রক্ত বের হল, তারপর রক্ত পড়া শেষ করলাম।

এরপরই বলল, কালাম লাইটা দাও (লাইট থাকার সত্বেও), আমি মুখ খুলতে পারছি না ( লেবাই লেবাই )। মানিক ভাইকে ফোন দাও, আমার ভাইকে ফোন দাও। আমাকে নিয়ে যেতে বলো, আমি বাঁচতে চাই। আমার মায়ের জন্য মন কাঁদে…. কালাম। আমি তাকে শান্ত করতে চাইলে তিনি আমাকে পারছিনা ভাই, আমাকে বাঁচতে দাও।

ডাক্তার নোবেল কুমার বড়ুয়াকে দেখে আনলাম, দেখলো, অবস্থা খারাপ, বলল, তারপর ভাই ও মানিক ভাইকে খবর দিতে গিয়ে হাসপাতালে বাইরে বের হয়ে (হাসপাতালের ভিতরে আমার মোবাইলের নেটওয়র্ক. ছিল না) সংযোগ না পেয়ে অস্থির হয়ে যায়, তারপর বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর কি হয়েছিল জানি না তবে আমার মনে আছে বাসার পাশের এক দারোয়ান আমাকে নিয়ে গেল বাসায়।

(অবশ্যই রাত আড়াইটাায় আমি মানিক ও কলিম ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম, তারা আমাকে থাকতে বলে ছিল)। এর আধঘন্টা অর্থাৎ ৫টায় পরই কালাম কালাম আল্লাহ, মা মা বলে মারা গেল… ওই সময় উখিয়ার আমাদের সিনিয়র বন্ধু নিধু ঋষির বন্ধু সমীরণ ছিল)।

আমি হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাকে সামলাতে গিয়ে নিজেই বেহুশ হয়ে না যেতাম তাহলে তার মৃত্যুতা দেখে যেতে পারতাম। আর মাত্র আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারিনি। তারপরে আমার কোন দোষ ছিলো না। সে সময় অনেককে ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবু শেষ রক্ষা করতে পারলাম না কবি মাসউদ শাফিকে। তার শেষ কথা, কালাম, কালাম কালাম তুই আমাকে ফেলে চলে যাইসনা, সবাই গেলেও তুই যাইসনা, আমিও কথাও দিয়েছিলাম। থেকেও ছিলাম। তারপরও তাকে রক্ষা করতে পারেনি।

শেষ মেষ নিজ কাঁধে তাকে রহুল্যারডেবাস্থ সালিম মসজিদ কবরস্থানে দাফন করে এলাম। এই দুঃখটা কোন দিন ভুলতে পারবনা। তিনিও আরো কোন দিন আমার বাসায় দরজায় কড়া নেড়ে ঘুম থেকে জাগাবে না। মারা যাবার পর বেশ কয়েকবার স্বপ্ন দেখেছি তারে প্রত্যেকবারই আমার দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছে আর কালাম কালাম বলে ডাক দিচ্ছে….
উনি মারা যাবার উনার শোক সভায় অনেককে মায়াকান্না এবং পোশাকি দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে, অথচ মারা যাবার একদিনও তাকে দেখতে যায়নি এবং বড় বড় কথা বলেছে।

অথচ ছাত্র ইউনিয়নের শোক সভার দিন অনেককে দেখলাম তার দোষ সম্পর্কে বলতে, দুই একজন ছাড়া আর সবাই তার দোষ টা দেখিয়েছে, তার কর্মকেও নয়। ওই সব পোশাকি মানুষ নামে অমানুষদের মাসউদ শাফি যেমন ঘৃণা করতেন তেমনি আমিও। মাসউদ শাফিকে নিয়ে লিখতে গেলে পুরো একটা গ্রন্থ লিখে শেষ করা যাবে না, কিন্তু এখন নয়, পরের এক লেখায় লিখবো বলে আশা রাখি।

তার সাথে আমার দ্বৈতাদত্তে প্রথাগত নিয়মের দ্বন্ধ থাকলেও একটি জায়গায় চরম অন্ত্যমিল। মাসউদ সাত বছর বয়সে পিতৃহারা হন, আমি আটে। আমেন।

লেখক: কালাম আজাদ, কবি, সাংবাদিক ও গবেষক। মাসউদ শাফির অকৃত্রিম বন্ধু ও একই পথের সারথী।

নিউজটি শেয়ার করুন:

  • Tweet
  • WhatsApp
  • Print
বিষয়: উখিয়াকক্সবাজারকালাম আজাদমাসউদ শাফি

Discussion about this post

সর্বশেষ

নির্বাচন কমিশন

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট দেখছেন সিইসি

রানা

সাংবাদিক আবদুল হাকিম উপর হামলা কারি সন্ত্রাসী রানা কারাগারে

বাংলাদেশ

আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক। ফাইল ছবি।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক উন্নয়নে ১৬৯ কোটি টাকা অনুমোদন

চকরিয়া

সভাপতি-মুকুল, সম্পাদক-বাপ্পী: রিপোর্টার্স ইউনিটি চকরিয়া কমিটি গঠিত

ফাতেমা

উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হলেন ফাতেমা জাহান চৌধুরী

লাইক দিয়ে সাথে থাকুন

  • আজকের পত্রিকা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারাদেশ
  • রাজনীতি
  • করোনাভাইরাস
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • কক্সবাজার
  • পর্যটন
  • লাইফস্টাইল
  • চাকরি
  • খেলা
  • রোহিঙ্গা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • মতামত

সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিক মাহমুদ

  • রিপোর্টিং ও বিজ্ঞাপন: +৮৮০১৮১২-৪২৯২৬৮
  • E-mail: info.bddarpan24@gmail.com
  • Contact Us
  • About Us
  • Privacy & Policy

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

স্বত্ব © ২০২১  বিডি দর্পণ

No Result
View All Result
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • সারাদেশ
  • রাজনীতি
  • মতামত
  • কক্সবাজার
  • অর্থনীতি
  • সীমান্ত
  • সম্পাদকীয়
  • পর্যটন
  • খেলা
  • রোহিঙ্গা
  • আরো
    • শিল্প ও সাহিত্য
    • আইন ও আদালত
    • লাইফস্টাইল
    • চাকরি
    • শিক্ষা
    • স্বাস্থ্য
    • অপরাধ
    • বিনোদন