মোঃ নূরুল হোসাইন:
কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে সম্প্রতি ডাক্তারের ভূল চিকিৎসা ও অবহেলায় উখিয়ার সৈয়দুল ইসলাম নামে এক কলেজ ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে এ প্রতিবেদককে ফোন করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন,আল ফুয়াদ এটা হাসপাতাল নয়, এটা একটা স্বীকৃত কসাইখানা।আর সেখানকার ডাক্তারেরা একেকজন হত্যাকারী আর কর্মচারীরা নবাবজাদা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,যুদ্ধাপরাধে দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত (কার্যকর) জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মালিকাধীন হাসপাতাল কক্সবাজার শহরের ‘ফুয়াদ আল খতিব’ হাসপাতাল।বর্তমানে কাশেম আলীর পরিবারের পক্ষে দীর্ঘদিন এটি পরিচালনা করে আসছেন জামায়াতপন্থি চিকিৎসক ডা.শাহ আলম। বর্তমানে তিনি (ডা.শাহ আলম) হাসপাতালটির চেয়ারম্যান। স্থানীয়রা এটিকে আল ফুয়াদ হাসপাতাল হিসেবেই চিনে।
আল ফুয়াদ হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভর্তি ও চিকিৎসার জন্য বেপরোয়াভাবে গলা কাটছে রোগিদের। এক প্রকার জিম্মি করে টাকা আদায় করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় একের পর এক রোগির মৃত্যু বা পঙ্গু হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন একটি ঘটনারও ব্যবস্থা নেয়নি। একারণে দিনদিন রোগিদের সাথে বেপরোয়া আচরণ করে যাচ্ছে আল ফুয়াদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ আছে, কতিপয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জামায়াতের এই হাসপাতাল থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। একারণে বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি। এই হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ রয়েছে সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.নুরুল করিম খাঁন, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.মোঃ জাফর ইকবাল ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা.শাহ আলমের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে টেকনাফের এক লোক বাথরুমের কমেডে পড়ে পায়ের রগ ছিড়ে যায়।তাৎক্ষণিক কক্সবাজার আল ফুয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা, জাফর ইকবালের তত্ত্বাবধানে ১ মাস ২০ দিন চিকিৎসা করার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। তখন ও-ই লোক থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিল আদায় করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।পরবর্তীতে ও-ই চিকিৎসকের ভূল চিকিৎসার কারনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান এর পরামর্শে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল সুস্থ হতে। তখন ও-ই রোগীর সাড়ে তিন লক্ষ টাকা মত খরচ হয়েছিল বলে জানান ওই রোগীর স্বজনরা।
২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল করিম খানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেড় বছর বয়সী রাইয়ান নামে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জেলায় জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। পরে এক রাজনৈতিক নেতার মধ্যস্থতায় অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছিল।
চলতি বছরের মার্চ মাসে এই হাসপাতালে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে ভর্তি থাকা হেলাল উদ্দিন নামে পুলিশের এক কর্মকর্তা হাসপাতাল কর্মচারীদের কাছে অসৌজন্য আচরণের শিকার হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের ফেইসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তার লেখা স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। সেটি নিয়ে সর্ব মহলে নিন্দার ঝড় ওঠেছিল।
একই বছর আরও একটি ঘটনায় অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রামু জোয়ারিয়া নালার এক গর্ভবতী মহিলাকে সিজারিয়ান ডেলিভারি করার জন্য রোগীকে অপারেশন রুমে ডুকানোর পরেও হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী টাকা জমা না দেওয়ায় সেই রোগীকে অপারেশন রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে এক সংবাদকর্মীর আর্থিক সহযোগিতায় টাকা জমা দিয়ে সেই রোগীর অপারেশন করা হয়। এরকম আরও অহরহ ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে জানান ও-ই সংবাদকর্মী। তিনি আরও বলেন এসব অপরাধের যথাযথ বিচার না হওয়ার কারনে এত বেশি বেপরোয়া আল ফুয়াদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এস এন্ড এস ইন্জিনিয়ারিং চট্টগ্রাম এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইন্জিনিয়ার সাহেদুল ইসলাম বলেন,২০১৯ আমার এক বড় ভাই ওনি একজন সংবাদকর্মী তার ৩ মাস বয়সী এক বাচ্চা ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মারা গিয়েছিল এ হাসপাতালে। আল ফুয়াদ হাসপাতালে সেবার নামে রোগীদের এক প্রকার জিম্মি করে টাকা আদায় করে এবং পরীক্ষা নীরিক্ষায় অধিক চার্জ এবং হাসপাতাল স্টাফদের ব্যবহার অশোভনীয় এমন অভিযোগ পুরোনো। রোগীদের এসব অভিযোগ গুলো তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
উপরোক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আল ফুয়াদ হাসপাতালের এডমিন অফিসার মোঃ সেলিম উল্লাহ সুজনের সাথে। তিনি বলেন,নিহত কলেজ ছাত্র আমার প্রতিবেশী ও পূর্বপরিচিত। সে ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আমাদের হাসপাতালে আসেন। তখন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালে ভর্তি দেওয়া হয়।
ওই দিন দুপুরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে চেক-আপ করে আরও কিছু পরীক্ষা দেওয়া হয়। তবে ও-ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর অবস্থা ভালো নয় এবং পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শসহ জরুরী বিভাগের চিকিৎসকের দেওয়া প্রাথমিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতে বলেন। সেই প্রাথমিক চিকিৎসা সকাল,দুপর ও রাতে সঠিকভাবে দেওয়া হয় বলে দাবী করেন তিনি।
পরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ও-ই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর স্বজনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করে তিনি আরও বলেন,যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে চিকিৎসায় দিলো না সেখানে কিভাবে ভূল চিকিৎসা আর অবহেলা হয় তা আমার বোধগম্য নয়।আর অনন্য অভিযোগও সেইম।
তিনি আরও জানান ওই কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়ে আজ (শনিবার) সিভিল সার্জন অফিস থেকে একটি টিম এসেছিল। তাদেরকে ও-ই ছাত্রের চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। বিষয়টি তারা দেখছেন বলে জানান তিনি।
Discussion about this post