শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার
কক্সবাজার শহরের ১ নং ওয়ার্ডের নুনিয়ারছড়া এলাকাটি এখন ইয়াবার গোডাউনে পরিণত হয়েছে। ছোট্ট এই এলাকা থেকে গেল মাসে জব্দ করা হয় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালানটি। এই চালানের প্রায় ১৭ লাখ ইয়াবা; সাথে পৌনে ২ কোটি টাকা জব্দ করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। এর আগেও ৩/৪ মাস পূর্বে প্রায় ৬০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, এই এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই এখন ইয়াবার অস্থিত্ব রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে কমিশনার মিজানের রহস্যজনক ভুমিকা এবং আটক ইয়াবা পাচারকারীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলো বারবার আলোচনায় উঠে আসছে। অন্যদিকে প্রভাবশালী এক সরকারদলীয় নেতার আশ্রয়ে থাকায় রীতিমতো রেহাই পেয়ে যাচ্ছে আইনের হাত থেকেও মাদক সংশ্লিষ্ট এই জনপ্রতিনিধি।
টানা অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করার পর পরই আত্মগোপনে চলে যায় কমিশনার মিজানের শিষ্য মাদক পাচারকারী সহযোগীরা। অন্যদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গুরু মিজান- এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
নুনিয়ারছড়া এলাকার সমাজ কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন- কমিশনার মিজান দীর্ঘদিন ধরে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। তার মাদক পাচারের সাথে সাথে জড়িত রয়েছে বিশাল এক সিন্ডিকেট। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন সম্পৃক্ত। জনপ্রতিনিধির ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি। এভাবে করে তিনি রাতারাতি বনে গেছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক।
সম্প্রতি কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণ করেছে কমিশনার মিজান। এ ধরণের ভবন নির্মাণ করার মতো টাকার যোগান দিতে দৃশ্যমান এবং বিশ্বাসযোগ্য কোনো ব্যবসা বাণিজ্য তার নেই। নেই তেমন কোনো আয়ের উৎসও। শুধুমাত্র কমিশানারী করে কত টাকা উপার্জন হয় এমন পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি।
সূত্রে জানা যায়- গত ১১ নভেম্বর দুপুরে নুনিয়ার ছড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ কমিশনার মিজানের ভগ্নিপতি মমতাজ মিয়ার বাড়ি থেকে ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় পুলিশ দুই পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হলেও মিজানের সহযোগিতায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তার ভগ্নিপতি মমতাজ।
সেদিনের ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতেও উঠে আসে কমিশনার মিজানের ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার এসব লোমহর্ষক তথ্য। এই ঘটনায় প্রায় ৫ লাখ ইয়াবার মজুদ ছিলো বলে জানা যায়। কিন্তু কাউন্সিলর ও তার ভগ্নিপতি মমতাজ ৬০ হাজার ইয়াবার তথ্য পুলিশকে দিয়ে বাকি ৪ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা নিজেরাই রেখে দেন। এখনও ইয়াবাগুলো কাউন্সিলর ও তার ভগ্নিপতির কাছে রয়েছে বলে সূত্রের দাবী।
স্থানীয়রা জানান, কাউন্সিলর’র শেল্টারে সেলিম ফিশিং ট্রলারের আড়ালে ইয়াবা পাচার করে আসছে। ইয়াবা ব্যবসা করে সেলিম আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যায় অল্পদিনের মধ্যে। কাউন্সিলর ও তার ভগ্নিপতি মমতাজকে দিয়ে ইয়াবাসহ নানা অপকর্ম করে বলে জানান এলাকাবাসী।
আরও জানা গেছে- কিছুদিন আগে কমিশনার মিজানের গৃহপরিচারক আমানুল্লাহ ১০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আটক হয়। বর্তমানে সে জেলে আছে। ইয়াবাগুলোর প্রকৃত মালিক কমিশনার মিজান বলেই নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এরপরে গেলো ৯ ফেব্রুয়ারী নুনিয়ার ছড়া এলাকার যুবদল নেতা ফারুকের কাছ থেকে স্মরণকালে সর্ববৃহৎ চালান ১৭ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় নতুন করে আবারও আলোচনায় আসে কমিশনার মিজান। এলাকার সচেতন ব্যাক্তিবর্গ জানিয়েছেন- ফারুকের প্রধান আশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করতেন মিজান। তার বিনিময়ে নিতেন নিয়মিত মোটা অংকের উৎকোচ। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে কমিশনার মিজানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে যুবদল নেতা ইয়াবা গডফাদার ফারুক। এমনকি তার পক্ষে নাতিদীর্ঘ এক বক্তব্যও উপস্থাপন করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মিজান ও তার ভগ্নিপতি মমতাজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট নানা কৌশলে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মাদক বিরোধী অভিযানে ওই পৌর কাউন্সিলর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি এলাকায় ফিরে ফের জনপ্রতিনিধির লেবাসে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে বলে জানা গেছে।
এদিকে উক্ত এলাকায় রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। এই কাজ চালাতে গিয়ে রাস্তার পাশে থাকা প্রতি বসত ঘর এবং দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা কমিশন হিসেবে আদায় করেছে। এবং ওই এলাকায় দায়িত্ব প্রাপ্ত একাধিক জনপ্রতিনিধির নাম ভাঙ্গিয়ে এসব চাঁদা উত্তোলন করে একাই ভোগ করে ফেলেছে কমিশনার মিজান। এমনি অভিযোগ স্থানীয় অপরাপর জনপ্রতিনিধিদের।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কমিশনার মিজানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার সাথে মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে সরাসরি নাকচ করে দেন এবং তার বৈধ আয়ের খাত গুলো নিয়ে সরাসরি আলোচনা করতে চান বলে ফোন লাইন কেটে দেন।
Discussion about this post