সুজাউদ্দিন রুবেল:
প্রতিবছরই ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। কিন্তু গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পরে সংক্রমণ কমলে সরকার বিধি-নিষেধ শিথিল করে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৫ এপ্রিলে ফের লকডাউন আসে, আবার বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। যা এখনো জারি আছে। সংক্রমণ না কমায় ঈদের ছুটিতেও খুলছে না সৈকত। কাজেই ফাঁকা থাকছে বিশ্বে দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত। আর সৈকতের প্রবেশদ্বারে কড়া পাহারা থাকবে বলে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক মো. সোহেল রানা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কক্সবাজারের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। কাউকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সৈকতের প্রবেশদ্বারের প্রতিটি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। একইসঙ্গে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়াও সর্বাক্ষণিক টহলে থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এদিকে কক্সবাজার চেম্বার অফ কর্মাসের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ এখন বেকার বসে আছে। করোনার কারণে এবারের ঈদেও কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
তিনি বলেন, ঈদের পরে কখন, কবে পর্যটন শিল্প আবার খুলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এই অবস্থায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে সচল করতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।
এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ায় আপাতত কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ঈদেও পর্যটক এবং স্থানীয় দর্শনার্থীদের জন্য সৈকত প্রবেশও বন্ধ থাকবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আল আমিন পারভেজ বলেন, করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকার যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, তার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করেছি। যেহেতু কক্সবাজারের এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, তাই পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
মো. আল আমিন পারভেজ আরও বলেন, স্থানীয় এবং বহিরাগত সকল পর্যটকদের জন্য সৈকতে প্রবেশ বন্ধ থাকবে। কারণ সৈকতের পয়েন্টগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়, যার ফলে করোনার হটস্পট পরিণত হতে পারে। তাই ঈদেও বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজ। রয়েছে ৪ শতাধিক রেস্তোরাঁ ও সহস্রাধিক বার্মিজ দোকান। পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বন্ধ রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোও।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, ঈদের পরে কখন, কবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। ঈদের পরপরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ ও বার্মিজ দোকানের কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সামান্য কিছু হোটেল তাদের কর্মীদের সহযোগিতা করলেও অধিকাংশ হোটেল তাও করেনি। সুতরাং এখন করোনার সংক্রমণ কমলে সরকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দিবে এমন প্রত্যাশা করছেন বলেও জানান কলিম উল্লাহ।
Discussion about this post