কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে বর্তমানে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থাকলেও একজন চক্ষু চিকিৎসক না থাকায় চরম ভোগান্তিতে সাধারণ চক্ষু রোগীরা। প্রায় তিন বছর ধরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেই কোনও চোখের ডাক্তার। ফলে চোখের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে অনেকটা বিনা চিকিৎসায়।
জেলার বাইরে থেকে যেসব ডাক্তার বিভিন্ন ক্লিনিকে এসে রোগী দেখেন, তাদের ফি বেশি হওয়ার কারণে গরিব রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। চক্ষু বিভাগের লাখ লাখ টাকার সরকারি যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
প্রফেসর, কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসারসহ সব পোস্ট খালি রয়েছে প্রায় তিন বছর ধরে। অথচ চক্ষু রোগ নির্ণয় করার স্লিট ল্যাম্প, ভিউ বক্স, কম্পিউটার মেশিনসহ সব যন্ত্রপাতি পড়ে আছে অনেকটা অযত্নে।
সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে হাসপাতালে চোখের চিকিৎসকের পদটি শূন্য রয়েছে। এরপর তিন বছর পার হলেও মন্ত্রণালয় থেকে আসেনি কোনও চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। প্রতি মাসে সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক ও শূন্য পদ উল্লেখ করে তালিকা পাঠানো হলেও মেলেনি চক্ষু চিকিৎসক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চিকিৎসক জানান, জেলা সদর হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ সচল করতে দিচ্ছে না একটি বাইরের সিন্ডিকেট। তারা নিজেরা রোগী দখল ও বাণিজ্য করতে সদরের চক্ষু বিভাগকে অকার্যকর করে রাখছে। এছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস থেকে শুরু করে প্র্যাকটিক্যাল কোন কোর্স পাচ্ছে না। মাঝে-মধ্যে শহরের বায়তুশ শরফ হাসপাতালে গিয়ে ইন্টার্নি করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের টিকেট কাউন্টার ও অনুসন্ধান বিভাগে রোগী সেজে টিকেটের কথা বললে দায়িত্বে থাকা এক মহিলা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি চাকরি করার পর থেকে চোখের ডাক্তার নেই। অনেক রোগী এসে ফেরত যায় নিজের থেকেও খারাপ লাগে অসহায় মানুষগুলো চলে গেলে। কেন নেই জানতে চাইলে তিনি স্যারদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হয় ৪৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চোখের সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরে অসুস্থ। গরিব বলে সদর হাসপাতালে আসি ডাক্তার দেখাতে। সবাই বলল, চোখের কোনও ডাক্তার নেই।’বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে ডাক্তারের ভিজিট কমপক্ষে ৫০০ টাকা এবং সপ্তাহের একদিন বা দুইদিন ডাক্তার পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি। তবে প্রাইভেটে ডাক্তার পাওয়া গেলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না।
আজিজা আনজুম (৩৫) নামে আরেক রোগী জানান, ‘চোখের ডাক্তার দেখাতে টেকনাফ থেকে অনেক কষ্ট করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এসেছি। এখন শুনলাম হাসপাতালে চোখের ডাক্তার নাই।’
উখিয়া রাজাপালং এলাকার দিনমজুর হাসান আলী (৪৫) বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই হাসপাতালে আসছি। টিকিট কাউন্টারে গেলেই বলে চোখের ডাক্তার নাই। হাসপাতালে সব ডাক্তার আছে তো চোখের ডাক্তার নাই কেন?’ এমন প্রশ্ন করলে বেশি কথা না বলে চলে যান বলে তাড়িয়ে দেয়।’
জেলা সদর হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত কম্পাউন্ডার জানান, ‘প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮০/৯০ রোগী চোখের ডাক্তারের টিকেট চান। হাসপাতালে চোখের ডাক্তার নেই কয়েক বছর ধরে। তাই আমরা চোখের ডাক্তারের টিকেট বিক্রি করি না। প্রতিদিনই চোখের ডাক্তার দেখাতে এসে অনেক রোগী ফিরে যান।’
জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোঃ আশিকুর রহমান জানান, ‘২০১৯ সাল ডা. গিয়াস উদ্দিন স্যার অবসরে যাওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চোখের চিকিৎসকের পদটি শূন্য রয়েছে। প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয় থেকে চোখের ডাক্তারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেই হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসবে।’
তিনি আরও জানান, ‘হাসপাতালের শূন্য পদগুলোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে বারবার। তবে এখন পর্যন্ত কোনও সুরাহা পাচ্ছি না। হাসপাতালে অতি দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল বাংলাদেশের একটি রুল মডেল হাসপাতাল দ্রুত চক্ষু বিভাগ সচল করতে উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
Discussion about this post