অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই:
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর অন্যতম কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলি পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম)।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও করোনাকালীন সময়েও মিলে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে, লোকবল কম থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করছে এই মিলটি।
পাকিস্তানের দাউদ কোম্পানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একসময় এই মিলটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩০ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু বতর্মানে দীর্ঘদিনের পুরাতন জরাজীর্ণ মেশিন ব্যবহার করার ফলে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
কেপিএম ব্যবস্থাপনা কতৃর্পক্ষ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৫- ২০ হাজার মেট্রিকটন হলেও কাঁচামাল সংকটসহ নানাবিধ কারনে গত অর্থ বছরে ৬ হাজার মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন করেছে মিলটি।
তবে এই ৬ হাজার মেট্রিকটন হতে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিকটন কাগজ কেপিএম গোডাউনে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে শ্রমিক কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। এইসব কাগজ বিক্রি হলে কেপিএম আবারোও ঘুঁরে দাঁড়াতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
কেপিএম সূত্রে জানা যায়, দেশের মধ্যে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেপিএম এর কাগজ মান ছিল সবচেয়ে উন্নত মানের, ফলে দেশের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই মিলের কাগজের ব্যাপক চাহিদা ছিল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে এই মিলের কাগজ ব্যবহার করা হতো, তাই কেপিএম সিংহভাগ কাগজ কিনতো সরকার প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল কারিকুলাম ফর টেক্স বোর্ড (এনসিটিবি)।
এইছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্টেশেনারি অফিস (বিএসও), শিক্ষা বোর্ড কেপিএম হতে কাগজ ক্রয় করতো। কিন্ত যথেষ্ট মানসম্মত হওয়া সত্ত্বেও এইসব প্রতিষ্ঠান বিগত ২ বছর ধরে কেপিএম হতে কাগজ কিনছে না, ফলে উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেপিএম প্রতিদিন ২০ টনের অধিক কাগজ উৎপাদনে যেতে পারছেনা, বর্তমানে প্রেক্ষাপটে যদি এইসব প্রতিষ্ঠান কেপিএম হতে নিয়মিত কাগজ সরবরাহ করতো তাহলে কেপিএম দৈনিক উৎপাদন আরোও বাড়াতে পারতো বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীরা।
কেপিএম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস এই প্রতিবেদককে জানান, কেপিএমকে আবারোও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার, বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এইছাড়া বর্তমানে কেপিএম এর কর্মকর্তা, শ্রমিক কর্মচারীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এই মিলটাকে আবারোও আগের জায়গায় ফেরত নিতে, তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০ মে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি ) চেয়ারম্যান মো. এহছানে এলাহী কর্ণফুলী পেপার মিল পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি কেপিএমকে কিভাবে আবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। কেপিএম এর এমডি আরোও জানান, সরকারি এইসব প্রতিষ্ঠান যদি কেপিএম হতে প্রতিনিয়ত কাগজ ক্রয় করে তাহলে আমরা লাভের মুখ দেখবো।
কেপিএম সিবিএ এর সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, বর্তমান কেপিএম এর ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত দক্ষ ও আন্তরিক। কেপিএম এর কাগজ এর মান আগের মতো আছে, কিন্ত এনসিটিবিসহ অন্যান্য কাগজ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যদি কেপিএম হতে নিয়মিত কাগজ ক্রয় করে, তাহলে কর্ণফুলি পেপার মিলটি আবারও ঘুঁরে দাঁড়াবে বলে আমার বিশ্বাস।
Discussion about this post