আলাউদ্দিন সিকদার, বালুখালী থেকে –
কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগুন লেগে গতকাল সোমবার ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘরসহ, মসজিদ, হাসপাতাল ও এনজিওর ভবন পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে আগুন লেগে প্রায় রাত ১০ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ মঙ্গলবার সকাল হতে বিভিন্ন জায়গা থেকে পুড়ে ছাই হওয়া সেই জায়গায় ফিরে আসতে দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের। দলেদলে পরিবারসহ পুরনো ঠিকানায় ফিরছে তারা। অনেকেই নতুন কাঠ, বাস নিয়ে ফিরছে। দেখা গেছে, কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী মিলে আহত মানুষদের সেবা প্রদান করছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। আমরা পরিবারসহ খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেছি। সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুড়ে যাওয়া স্থানেই ফিরেছি।
আরেক রোহিঙ্গা জানান, বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ পাশ্ববর্তী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলাম। সকালে আবারও পরিবারসহ এখানে আসলাম।
এ ঘটনায় স্বজন হারানো এক রোহিঙ্গা জানান, আমাদের আত্মীয়ের মধ্যে দুজন শিশু মারা গেছে জানতে পেরেছি। তার মধ্যে একজন আড়াই বছর বয়সী মুশরফা, আরেকজন সাড়ে তিনবছর বয়সী তসলিমা।
এর আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শেষে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। অনেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে। এছাড়াও হাজারো রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবারসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই স্থান না পেয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করতে দেখা গেছে।
উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আজাদ জানান, প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এখন তারা গৃহহীন। তারা বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত আছে। আমি মনে করি গৃহহীন এই ১০ হাজার পরিবারগুলোকে দ্রুত ভাসানরে স্থানান্তর করলে তারা একটা নিরাপদ বাসস্থান পাবে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ও রোহিঙ্গা মা-বোনদের মাঝে গতরাতে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরীও আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানীয় এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন।
উল্লেখ্য, গতকাল ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়াও স্থানীয় সূত্রমতে এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে এবং আহত বহু। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
Discussion about this post