নিজস্ব প্রতিবেদক:
উখিয়া ও টেকনাফ থেকে আরও সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা পঞ্চম দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বা বুধবার তাদের নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে রোহিঙ্গা বহনকারী বাস। ইতোমধ্যে উখিয়া কলেজ মাঠ প্রাঙ্গনে অস্হায়ী তাবু তৈরী করে ক্যাম্প করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্প ও ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প নিয়ে আসা হচ্ছে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন শান্ত। স্ব -স্ব ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম জমা দিচ্ছে। এর আগে চার দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে গেলেন ৯ হাজার ৫শ ৪০ জন রোহিঙ্গা।’
রোহিঙ্গা মাঝিরা জানান, স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে রোহিঙ্গারা ভাসানচর গিয়ে সেখানকার পরিবেশ, থাকা খাওয়ার সুবিধা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জানালে যারা যেতে রাজি হয়েছে। তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে ভাসানচর স্থানান্তর করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের মুখে উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাড়ে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়।
আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, এর আগে চার দফায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৮৮ জন রোহিঙ্গাকে। এর মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে স্থানান্তরের প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে গিয়েছে। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ভাসানচরে গিয়েছে ১ হাজার ৮০৫ জন রোহিঙ্গা ও তৃতীয় ধাপে দুইদিনে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি ৩ হাজার ২০০জন রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন দুপুর ১২টায় ৩৯টি বাসে ২০১৪জন রোহিঙ্গা ও ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ১৮টি বাসে ৮৭৯জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করে। ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে মোট ১ লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
আশ্রয়শিবিরগুলো বেশির ভাগ পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি। বর্ষার সময় পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হয়, হতাহতের ঘটনা ঘটে। আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। খুনখারাবি, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ হচ্ছে। ইয়াবার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
Discussion about this post