রওনক জাহানের গুচ্ছ কবিতা
শুদ্ধ জল
ভিজিয়ে যাও আজ শুকনো মাটির প্রাণ,
ভরিয়ে দাও দেহের ভেতর সকল শূন্যস্থান৷
তোমার ধারায় ভাসতে যে চাই
সকল গ্লানি ঘুচতে যে চাই
প্রাণের সকল শিরায় শিরায় শুদ্ধতা করো দান৷
চোখের তারায় পরশ দিও এনে
হাত দুটি আজ পেতেছি সামনে
দু’ফোটা শুদ্ধ জলে অঞ্জলি আজ দিয়ে যেও ভরবে এ প্রাণ৷
অবুঝ মনের সবুজ সাথী
আমার একজন মাত্র বন্ধু আছে তার নাম প্রকৃতি বাল্যবন্ধু, সেই কবে তার সাথে হয়েছিলো প্রীতি
সেই থেকে আমার পথচলায় নিত্য অনুরাগে
জড়িয়ে থাকে বক্ষে আমার চিত্ত সবুজবাগে
তখন আমি অবুঝ ভীষণ
সেই থেকে প্রাণের বাঁধন
ভালোবাসার আহ্লাদে মন তারে বাঁধে প্রাণে
ছোট্ট মনের আহ্বানে দেখতাম সে অনেকটুকু সাড়া দিতে জানে ভালোবাসার প্রথম পরশ পেয়ে সুখেই আমি ঘুমিয়ে যেতাম তার আঁচল ছুঁয়ে …..
সে ছিলো আমার অবুঝ মনের সবুজ সাথী
তাকে ভেবে রাঙিয়ে নিতাম ঘুম ভাঙা সারা রাতি
ছোট্ট আমি তাকেই ঘিরে স্বপ্ন বুনে ধীরে ধীরে
স্বপ্ন পরশ ওড়তো আমার মনের তীরে।
সে আমার প্রথম প্রকাশ ভালোবাসার মধুর যন্ত্রণায় কাঁটতো
রঙিণ দিনের বাহার সে আমায় হাসিয়ে দিতো, ভাসিয়ে দিতো কান্না ভরা অথৈ চোখের জলে কখনো বা ক্ষ্যাপা বাউলের মতো ভালোবাসার সারেং হয়ে জ্বলে ভালোবাসার সাতরংয়ে জীবন আমার হতো পূর্ণ আজও সে তেমনি আছে ভালোবাসায় ধন্য ।
যখন আমার মনোভূমি শুকিয়ে মরে ধুধু বালুচরে তপ্ত মরুভূমি
তখনই তার কাছে যাই- অনন্ত-অধরারই মাছরাঙা ঠোঁট চুমি।
আষাঢ়ীয় তালের শাস
আজ আষাঢ়ের প্রথম প্রহর,মেঘ আকাশের সামিয়ানা
দিনের শুরুটা বৃষ্টির ঠোটে আঁকা আস্ত একটা আল্পনা!
অগুনিত সূর্য হাসে বর্ষায় কদমের ডাল ভরা
আস্ত সূর্যের ঝোপা হাতে ঘুরে পল্লী বালকেরা৷
সারাদিন টিপ টিপ ঝরে পরা সুকোমল বৃষ্টিধারায়
স্কুল পড়ুয়া বালিকারা ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরে যায়৷
তালের শাস মুখে রসালো আয়েসে বুড়ো দাদুর পাকা দাঁড়ি
হলদেটে হয়, গ্রাম্য যুবকেরা নেশায় বুদ হয় খেয়ে খেয়ে তাড়ি৷
আঁষাঢ়ের বাদল মাথায়, বধুরা সব পাড়ায় পাড়ায়
বৃষ্টি ভেজা বিকেল বেলার কর্মবিহীন আসর জমায়৷
নদীতে ঢল নামে যে, খালবিল সব টইটুম্বুর জল থৈ থৈ
এই আঁষাঢ়ে কলার ভেলায় চেপে বসে ছিঁপ ফেলে রই৷
বৈকালী মেঘলা রোদ
আকাশে আজ ভাসিয়ে দিলাম রংধনু মেঘ-মেলা
দেখে দেখে কেটে যাবে মন ময়ুরীর বেলা
দিগন্তে ঐ সূর্যরেখা
আঁকলো এ কোন্ মায়ার জ্যোতিকা
আবেশে আমায় বিহ্বল করে তার আলো ঝলমল খেলা
আকাশে আজ ভাসিয়ে দিলাম রংধনু মেঘ-মেলা
ছায়া সুনিবিড় বৃক্ষ তরুর
শ্যামল পাতায় পরশ চুমুর
বুঝিয়ে দিয়ে যায় অস্তপারের তপন বাবু
সবুজ পাতা সোনারোদ প্রেম মাঝে করে হাবুডুবু
ঝিলে পাখি ওড়ে ঐ দেখ দূরে দিগন্ত রেখা
ছুঁয়ে দিয়ে যায় লাল সূর যেন একটু আলো জমা রাখা।
তারপর ছুটে চলা এবেরাতের ভ্রমণ অভিমুখে
কত দেশ-ভিন্ন সভ্যতা চলার পথে দেখে দেখে
শেষে একেবারে ঠিক সময়েই উঁকি দেয় আমাদের খোলা জানালায়
ঝাঁঝাঁলো আদরে কত কুম্ভকর্ণ চোখ মেলে চায়
বিরক্তিতে কত নবদম্পতি অভিযোগ দেয় অন্ধ হোক
যুগে যুগে এতো শাপান্ত মুখে পুড়ে পুড়ে আজ এতটা প্রখর তার চোখ।
প্রাপ্তিযোগ
নৈর্ব্যক্তিক পথ বিছিয়ে শূন্যস্থান এঁকে দিলে প্রবেশ মুখে
দ্বিধা দ্বন্দ্বে কেটে গেলে বেলা শূন্য খাতাই জমা থাকে বুকে!
প্রাপ্তিযোগে নম্বরপত্রে শূন্য দিতে হাত কাঁপেনি তোমার
শূণ্য খাতা দেখলে!দেখোনি বুকে ব্যর্থতার তীব্র চিৎকার?
Discussion about this post