নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। এই লকডাউন ২০ মে রাত থেকে কার্যকর হয়েছে, চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। কুতুপালং ওয়েস্ট ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাঝে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি)।
ক্যাম্পগুলোতে লকডাউন চলাকালে জরুরি বিষয় ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। লকডাউনের আওতায় যেসব ক্যাম্প রয়েছে সেসব ক্যাম্পে ভেতরে-বাইরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থাসহ ওই ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলের গাড়ি চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ২০ মে পর্যন্ত ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪১ হাজার ৪৭৭ জনের নমুনা টেস্ট করে ৯১৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে উখিয়া উপজেলার ক্যাম্পগুলোতে ৭৪০ জন ও টেকনাফ উপজেলার ক্যাম্পগুলোতে ১৭৩ জন রোহিঙ্গা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনায় ১৩ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শুধুমাত্র ১৯ মে ও ২০ মে দুই দিনে নতুন করে ৯০ জন রোহিঙ্গার করোনা শনাক্ত হয়।
৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শুধুমাত্র উখিয়ার পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। অন্যদিকে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সংক্রমণ একটু কম হওয়ায় লকডাউন দেয়নি কতৃপক্ষ। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যতীত পুরো টেকনাফ উপজেলাকে শুক্রবার ২১ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৯ মে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির আরেকটি অনলাইন সভায় সীমান্ত উপজেলা, রোহিঙ্গা শরনার্থীর আধিক্য ইত্যাদি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হু হু করে করোনা সংক্রমণ ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এখন রোহিঙ্গাদের তুলনায় অনেক কম আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। তবে রোহিঙ্গাদের বসবাস স্থানীয় জনগোষ্ঠীর একেবারে পাশ্ববর্তী হওয়ায় গভীরভাবে উদ্বীগ্ন তারা। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে লকডাউনের আওতায় আনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। তবে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আরও কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উখিয়া উপজেলায় করোনা সংক্রমণ ও আক্রান্ত বাড়ছে। তবে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গা ও এনজিও সংস্থার কর্মীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত করোনা তেমন বৃদ্ধি পায়নি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এনজিওকর্মীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পে আবারও যোগদানের পর থেকে সংক্রমণের হার বেড়েছে। তাদের কারণে স্থানীয়রাও আতঙ্কে। যে সকল এনজিওকর্মী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঈদ পালন করে কর্মক্ষেত্রে ফিরেছে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখার দাবি জানান তিনি।
করোনাকালে স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
Discussion about this post