বিশেষ প্রতিবেদক:
প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশি এনআইডি হাতিয়ে নেওয়া কক্সবাজার শহরের ১নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা মো: রফিকের ব্যবহৃত এনআইডিটি স্থগিত ও পরবর্তীতে যাবতীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক কার্ডটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় রোহিঙ্গা ভোটার ও পাসপোর্ট প্রতিরোধ কমিটি নামে একটি সামাজিক সংগঠনের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা নির্বাচন অফিস এই সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
সূত্রে জানা যায়-অভিযুক্ত রোহিঙ্গা মো: রফিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সে তার নিজের পিতা মাতার নাম গোপন করে কথিত মা-বাবার নাম ঠিকানা ও সূত্র ব্যবহার করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে সুক্ষ্ম কৌশলে বাংলাদেশী জাতিয় পরিচয় পত্র হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল ৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রোহিঙ্গা মো: রফিকের বিরুদ্ধে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন রোহিঙ্গা ভোটার ও পাসপোর্ট প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনির সভাপতি ও জেলার সাংবাদিক নেতা মো. শহীদুল্লাহ জানান-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়ে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রিত। তারা আমাদের মেহমানের মতো সমাদর পাবে। কিন্তু এই মানবিক উদ্যোগকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কোনো রোহিঙ্গা এদেশের নাগরিক হয়ে যাওয়া জেলাসহ সারাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। ইতিমধ্যেই এধরণের রোহিঙ্গারা জেলাজুড়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। অনতিবিলম্বে এদের খুঁজে খুঁজে বের করে এনআইডি বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে তৎপর হতে হবে।
রোহিঙ্গা মো: রফিকের ব্যবহৃত এনআইডি স্থগিত ও পরবর্তীতে বাতিলসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়ায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা ভোটার ও পাসপোর্ট প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক স্বপন কান্তি দে।
তিনি বলেন-আমরা দীর্ঘ অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছি উল্লেখিত রোহিঙ্গা ব্যাক্তি নানা ভাবে প্রতারণা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশি এনআইডি হাতিয়ে নিয়ে ব্যবহার করছে। তার বিরুদ্ধে আজ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন জমা দিয়েছি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রোহিঙ্গা মো: রফিকের ব্যবহৃত এনআইডিটি স্থগিত করবেন বলে জানিয়েছেন এবং যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে রোহিঙ্গা মো: রফিক সহ এনআইডি ও জন্মসনদ হাতিয়ে নেওয়া অপরাপর দুস্কৃতিকারী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গা ভোটার ও পাসপোর্ট প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার উপদেষ্টা ও জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী।
তিনি জানান-মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিয়ম মেনে শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করবে। কিন্তু তারা যদি বাংলাদেশী এনআইডি সংগ্রহ করে ভোটার হয়ে যায় বা নাগরিক হয়ে যায় তাহলে তো বিপদ। এধরণের দুস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলকে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে।
শহরের ১নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ায় বসবাসকারী একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান-রোহিঙ্গা মো: রফিক ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি করে নিয়েছে এটা সত্য। সে এনআইডি হাতে পেয়ে অপরাধ জগতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মাদক বিক্রি, নারী ও শিশু নির্যাতন, হাঙ্গামা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারসহ কমপক্ষে ৮টি মামলা রয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত রোহিঙ্গা মো: রফিকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন-এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি রোহিঙ্গা হলে আমার মতো এধরণের হাজার হাজার লোক আছে তাদের নিয়ে কেনো আপনারা ব্যবস্থা নেন না। শুধু শুধু আমার পেছনে লেগে আছেন। নিজেকে বাংলাদেশী দাবী করার সপক্ষে এনআইডি ছাড়া জন্ম সনদ বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট হাতে আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি খুব ঝামেলায় আছেন দাবী করে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন প্রতিবেদককে জানান-রোহিঙ্গা ভোটার ও পাসপোর্ট প্রতিরোধ কমিটি নামে একটি সংগঠন উল্লেখিত মো: রফিককে মিয়ানমারের উল্লেখ করে তার এনআইডিটি বাতিলের জন্য একটি আবেদন পত্র জমা দিয়েছে। আমরা তা গ্রহণ করেছি। এব্যাপারে আমরা প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত ব্যাক্তির এনআইডি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পরর্বতীতে আরো তদন্ত করে প্রমাণ পেলে যাবতীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Discussion about this post