নিজস্ব প্রতিবেদক, উখিয়া:
বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও ক্যাম্পে কর্মরত সহযোগী সংস্থা গুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় গতকাল মঙ্গলবার ১০ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়।
উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি শরনার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করা বয়সোপযোগী সকল রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে করোনা ভ্যাকসিনের আওতার পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছর ও তদুর্ধ বয়সী ৪৮ হাজার ৬০০ শরনার্থীদের শরীরে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার শরনার্থী ক্যাম্প এক্সটেনশন-৪ এ আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত হিসাবে জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর কক্সবাজার অফিস প্রধান মিস. ইতা সুটে, আইওএম এর প্রধান মি. ম্যানুয়েল মার্কাস, ১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) নাঈমুল হক, আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. তোহা এইচ ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরআরআরসি শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে চীনের তৈরি সিনোফার্মার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ৩৪ টি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ৫৬ টি টিকা কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
এজন্য ক্যাম্প গুলোর টিকা কেন্দ্রে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেটর, নার্স, টেকনেশিয়ান, স্বাস্থ্য কর্মী সহ অন্যান্যদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালন ও শৃংখলা রক্ষায় এপিবিএন ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ডোজ টিকাদান প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া সকল রোহিঙ্গাদের পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ২ ডোজের পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান নিজে স্বহস্তে একজন রোহিঙ্গাকে টিকা দেওয়ার মাধমে এ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন।
এর পর পর ৫৬ টি টিকা কেন্দ্রে পুরোদমে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উদ্বোধনের পর ৫৬ টি টিকা কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের বেশ আগ্রহের সাথে টিকা নিতে দেখা যায়। ক্যাম্পে টিকা কার্যক্রম অনেকটা উৎসবে পরিণত হয়।
মধুরছড়া আশ্রয় শিবিরের রোহিঙ্গা ছৈয়দউল্লাহ (৬০) বলেন, টিকার জন্য এ শিবির থেকে অন্তত ২ হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে যাদের বয়স ৫০- ৮০ বছর। এ শিবিরে রোহিঙ্গা আছে প্রায় ৮০ হাজার। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি।
প্রসঙ্গত, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে গত প্রায় ১৭ মাসে কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ২১৪ জনের মধ্যে মাত্র ২৯ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। তারমধ্যে, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ২৭ জন এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুরু থেকে গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ২৬৮০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, উখিয়ার ক্যাম্প গুলোতে ২ হাজার ১৮৫ জন এবং টেকনাফের ক্যাম্প গুলোতে ৪৯৫ জন।
প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী ৩৪টি ক্যাম্পে মাত্র ৬৫ হাজার বর্গ একর পাহাড়ি এলাকায় গাদাগাদি করে বসবাস করলেও কক্সবাজার ও সারাদেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির তুলনায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প সমুহে করোনা সংক্রামণ হয়েছে অপেক্ষাকৃত অনেক কম। ক্যাম্প গুলোতে সময়মতো করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বাধ্য করায় ক্যাম্প সমুহে করোনা সংক্রামণ অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
Discussion about this post